মোঃ সাইদুর রহমান সাদী \
সম্প্রীতির বন্ধনে ফিরে আসি বারবার’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে পালিত হয়েছে আলোকিত মানুষ গড়ার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কেন্দুয়া বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান। গত ২ এপ্রিল বুধবার সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসেছিল নবীন ও প্রবীণদের এক মিলনমেলা। এ উপলক্ষে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেন বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর উৎসবের সৃষ্টি হয়েছিল বিদ্যালয় প্রঙ্গনে। গত ১ এপ্রিল কেন্দুয়া বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূতি উপলক্ষে শতবর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক, ১নং কেন্দুয়া ইউনিয়নের কৃতি সন্তান, শিক্ষানুরাগী, বিশিষ্ট সমাজসেবক, জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন মিলনের নেতৃত্বে কেন্দুয়া বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে ২’শ মোটরসাইকেল, ৪টি ট্রাক ও ১৬টি প্রাইভেটকারের বহর নিয়ে নবীন ও প্রবীন ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালীটি কেন্দুয়া বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হয়ে টিউবওয়েলপাড় মোড়, দিগপাইত, পপুলার মোড় হয়ে কেন্দুয়া বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে শেষ হয়। দ্বিতীয় দিন গত ২ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। সকাল ৮টা থেকে কেন্দুয়া বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের নবীন-প্রবীণ ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে থাকে অনুষ্ঠান স্থলে। নবীন-প্রবীণ ছাত্র-ছাত্রীরা অনুষ্ঠান স্থলে আসামাত্র তাদেরকে দেওয়া হয় ডেলিগেট কার্ড, গেঞ্জি, টুপি ও ব্যাগ। নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান চত্বর হয়ে ওঠে মুখরিত। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে চলে দিনভর বিভিন্ন ব্যাচের শৈশবের কথা, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, সংবর্ধনা। ফাঁকে ফাঁকে চলে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেলফি আর ফটোসেশন। এছাড়াও বর্তমান শিক্ষার্থীরা আবীর রঙে রাঙিয়ে দেয় নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন পর প্রিয় সহপাঠি বা প্রিয় বান্ধবীকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে আসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তারা প্রথমদিনেই ফিরে যান উচ্ছল তারুণ্যে ভরা দিনগুলোতে। পুরোনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরষ্পর জড়িয়ে ধরে আত্মহারা হয়ে হাত হাত ধরে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করেন। অনেকে আবার পুরোনো সহপাঠীদের পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যাস্ত। কেউ কেউ স্কুল আঙিনায় হেঁটে হেঁটে পুরোনো স্মৃতি খুঁজতে থাকে। স্মৃতিচারণ করে ক্যামেরায় পুরোনো বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলে ফটোসেশন করেন। সকাল ১১টায় শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলো অতিথিদের আসন গ্রহন, অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ, কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে রচিত নবীন ও প্রবীণ ছঅত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় দলীয় গান, অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান ও আলোচনা সভা। শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও শতবর্ষ উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মোঃ রুহুল আমিন মিলনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ডিআইজি হারুন অর রশিদ সম্রাট, অতিরিক্ত ডিআইজি ইমামুর রশিদ রতন, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমনুর করিম, সমন্বয়ক আমির উদ্দিন, মোঃ মমিনুর রহমান খান, মোঃ মোরশেদ ইকবাল রিমু, মোঃ রুকুনুজ্জামান রুকন, আইরিন পারভীন লিপি, বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও ছাত্রী যথাক্রমে তাহমিনা পারভীন, ডা. রুনা লায়লা, ডা. সিদ্দিকুর রহমান, ডা. সাইফুল্ল্যাহ কবির, প্রভাষক তাজরুল ইসলাম, জাহিদ আনোয়ার, মেজর নজরুল ইসলাম, হারুন অর রশীদ, মাহবুবুর রহমান কাজল, মেহেদী হাসান মিলন, আকরামুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান লিটু, হুমাউন কবির স্বপন, মিল্টন, অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শেখ এম.এ. মান্নাফ, ডা. হারুন অর রশীদসহ আরও অনেকেই। রুহুল আমিন মিলনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা এবং নিবেদিতপ্রাণের উদ্যোগে এ ঐতিহাসিক আয়োজন একটি স্মরণীয় অধ্যায়ে পরিণত হয়। শিক্ষার প্রসারে তার নিরলস ভূমিকা, বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অব্যাহত অবদান এবং শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে সজীবতা ও গর্বের আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা এলাকার প্রতিটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। একজন সংগঠক হিসেবে তিনি শুধু দায়িত্ব পালন করেননি, বরং শতবর্ষপূর্তি আয়োজনে নিজের সময়, শ্রম ও মননের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এটিকে রূপ দিয়েছেন একটি ঐতিহাসিক উৎসবে। দীর্ঘ শত বছরের পথচলায় বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় অসংখ্য গুণী মানুষের জন্ম দিয়েছে, যারা দেশ-বিদেশে নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এ আয়োজন সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক অনন্য উদাহরণ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষা-ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে যুগোপযোগী শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। সব মিলিয়ে শতবর্ষপূর্তি উৎসব হয়ে ওঠে আনন্দ, গর্ব ও কৃতজ্ঞতার এক মহোৎসবে, যা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে শুরু হয় নবীন ও প্রবীন ছাত্র-ছাত্রীদের স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর শুরু হয় নবীন ও প্রবীন ছাত্র-ছাত্রী এবং জামালপুরের সুনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি গভীর রাত পর্যন্ত সুষ্ঠ্য ও সুন্দরভাবে সমাপ্ত হয়।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন