ছাইদুর রহমান \
গত ২৫ বছর ধরে জামালপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে শীতের সবজি হিসেবে টমেটো আবাদ হয়ে আসছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে এর দাম কিছুটা ভালো থাকলে শেষের দিকে দাম একেবারের হ্রাস পায়। তখন টমেটো চাষিরা ন্যায্যমূল্যের অভাবে শত শত মণ টমেটো গো-খাদ্যে পরিণত করে। পুকুরে, নদীতে, পথে ঘাটে, হাটে-বাজারে ফেলে দেয়। টমেটোর উপর প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে। মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে। তাই আজ সর্ব মহল থেকে দাবি উঠেছে নান্দিনায় যেন একটি টমেটো প্রক্রিয়াজাতরণ কারখানা জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জানা গেছে, প্রতি বছর জামালপুর সদরের চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ শীতকালীন টমেটো আবাদ হয়ে আসছে। বিশেষ করে লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, রানাগাছা, শরিফপুর, নরুন্দি, ইটাইল ইউনিয়ন ছাড়াও সদরের আরো কয়েকটি এলাকায় টমেটোর চাষ হয়ে আসছে। প্রতি বছর কৃষকরা সাধারণত আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ীর আঙ্গিনায় পলিথিনের মাচা তৈরীর মাধ্যমে টমেটোর বীজ বপন এবং চারা তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। এরপর অক্টোবরের শুরুতেই সেই টমেটোর চারা চরের বালু মাটিতে শক্ত খুঁটির সাথে বসিয়ে রোপনের ধুম পড়ে যায়। টমেটো আবাদ করে চরের হাজার হাজার মানুষ আজ স্বাবলম্ভী। চাষিরা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতার পথ খোঁজে পেয়েছেন।
দরিদ্র চরবাসীকে এখন আগের মত আর অন্যের বাড়ীতে বছরবান্দা কামলা, দিনমজুরী খেটে জীবন কাটাতে হয়না। ভিক্ষ্যের ঝুলি হাতে নিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভিক্ষ্যে করতে হয়না। মঙ্গা, অভাব, হাহাকার চরবাসীকে এখন আর হাতছানি দিয়ে ডাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পেটভরে দু‘বেলা খাবার দু‘মুঠো খেতে পারছেন। চরবাসীর শতকরা ৮০জনই এখন টিনের ঘরে বাস করেন। টমেটোর মৌসুম শুরু হলে রাজধানী ছাড়াও কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকারীরা ট্রাক, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন ধরণের গাড়ীযোগে শত শত মণ টমেটো কিনে নিয়ে যায়। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিমণ টমেটো পাইকারী ১২শটাকা থেকে ১৬শ‘টাকায় বিক্রি হলেও আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
টমেটোর প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী নান্দিনা বাজার ছাড়াও শরিফপুর বাজার, মহেশপুর কালিবাড়ী, বারুয়ামারী, গজারিয়া মোড়, নরুন্দি বাজার, তারাগঞ্জ বাজারের টমেটোর হাট বসে। চরএলাকায় সাধারণত: উদয়ন, উন্নয়ন, দিগন্ত, রুপসী, বিউটিফুল, লাভলী, ব্র্যাকের আবিস্কৃত ১৭৩৬, সফল, কোহিনুর মঙ্গলসুপার ও মঙ্গলরাজা। এর মধ্যে বিউটিফুল, দিগন্ত, রুপসী জাতের টমেটোর বাম্পার ফলন হয়। একবিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে সর্বমোট খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ফলন ও দাম ভালো থাকলে খরচ উঠিয়ে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো ফসলে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে টমেটোর দরপতন ঘটে। শেষের দিকে কৃষকরা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে চায় না দাম না থাকার কারণে। তখন এক মণ টমেটোর দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে আসে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নান্দিনায় টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের দাবি উঠেছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় খড়খড়িয়া গোলাপ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, জামালপুরে শীতকালীন সবজি হিসেবে টমেটোর ব্যাপক উৎপাদন হয়। টমেটোর সঠিক ব্যবহারের অভাবে অনেক টমেটোর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারলে ক্রেতা-বিক্রেতা বেড়ে যাবে। পাশাপাশি চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। এতে অপচয় রোধ হবে। অর্থনৈতিক গতি প্রকৃতি বৃদ্ধি পাবে। সামাজিকভাবে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়বে। শহিদুল আরো বলেন বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর মধ্যে এখন বেকার সমস্যা অন্যতম একটি জাতীয় সমস্যা। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নান্দিনায় কারখানা স্থাপিত হলে অসংখ্য বেকার, শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিক, দক্ষ-অদক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কারণ টমেটো উৎপাদন থেকে শুরু করে টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত প্রচুর লোকের প্রয়োজন হবে। ফলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়ও বাড়বে। উৎপাদনের গতিশীলতা বাড়বে। নান্দিনায় কারখানা স্থাপিত হলে টমেটোর উৎপাদন বাড়বে এবং চাহিদা বাড়বে। প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
টমেটো একটি শীতকালীন কৃষি জাতীয় সবজি। এটি সাধারণত: গ্রামের কৃষকরাই চাষাবাদ করে থাকেন। পাকা বা আধাপাকা অবস্থায় টমেটো তোলা শুরু হয়। তখন খানিকটা মূল্য পেলেও পরে তা একেবারেই হ্রাস পায়। ফলে স্থানীয় বা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়। যার ফলে তারা শীতের এই সু-স্বাদু সবজিটির সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
এছাড়াও এই পণ্যটি সারা বছর পর্যপ্ত চাহিদা থাকা সত্বেও তারা উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য পায় না। তাই নান্দিনাতে এ কারখানা হওয়া খুবই জরুরি। টমেটো উৎপাদনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো: এদেশে প্রচুর কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। আর তাই আমাদের দেশে শীতের মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ টমেটো উৎপাদিত হয়ে থাকে। কারণ দেশে আবহাওয়া ও ভুমি প্রকৃতি টমেটো চাষের জন্য উপযোগী। এখানে আধুনিক যুগ উন্নত প্রযুক্তির সহায়ত ফলে অতি উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর জাত রয়েছে।এই উন্নত জাতের বীজ লাগিয়ে কৃষকরা শীতের মৌসুমে টমেটোর বাম্পার ফলন পায়।
নান্দিনায় কারখানা স্থাপিত হলে টমেটোর ব্যাপক উৎপাদনটিকে সঠিক সময়ে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। নান্দিনায় টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা হলে এটা দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ করা যাবে। পচনশীল রোধ করা যাবে। তাই নান্দিনায় টমেটো প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠায় শিল্প মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন