বুলেটের ঝাঝড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে ঘাটাইলের আরিফ

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
0


ঘাটাইল প্রতিনিধি ।।

মোঃ আরিফ হোসেন(২১)। মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছোঁড়া বুলেটে ঝাঝড়া পুরো শরীর। প্রায় ২ মাস চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে থাকা ঘাটাইলের আরিফ। স্থানিয় ধলাপাড়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছেন তিনি। অত্যান্ত হত দরিদ্র ঘরের সন্তান তিনি। বৈষম্যের শিকল ভাঙতে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের পুত্র আরিফ হোসেন। জুলাই অভ্যুত্থানে মর্মস্পরশী বর্ননা দিচ্ছিলেন তিনি।

১৯ জুলাই ঢাকার উত্তরা বোনের বাসায় বেড়াতে যান আরিফ। ২০ জুলাই বিকেল বেলা চা খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। এমন সময় দেখেন উত্তরা ৭নং সেক্টর  বিভিন্ন সড়ক দিয়ে আন্দোলন কারিরা মিছিল নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে। তখন সন্ধ্যে ৭টা। আরিফ হোসেন বসে না থেকে সংযুক্ত হন আন্দোলন কারিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিছিলে কিছু পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলন কারিরা। এমন সময় পুলিশের তিনটা গাড়ী আসে। ওই গাড়ী থেকে ভারি অস্ত্রে মুহুর্মুহ গুলি ছুড়ে পুলিশ। তাদের ছোঁড়া গুলি পিঠ বিদ্ধ হয়ে আমার বুকের পাজর ও ডানা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সড়কে লুটে পড়ি আমি। তখনও আমার জ্ঞান আছে। পরে আমার সহযোদ্ধা বন্ধুরা আমাকে প্রথমে উত্তরাস্থ ঢাকা স্পেশালাইজড হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাত ১২টার পর তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রথমে সার্জারি বিভাগে (ওয়ার্ড নং-১০১,বেড নং-৬) ভর্তি করা হয়। বুলেটের ছোঁড়া গুলিতে ঝাঝড়া হওয়ায় প্রথমে তার খাদ্যনালিতে ৭ ঘন্টা অস্ত্রোপাচার করা হয়। পরে বুকের বা পাশে পাজরে ইনফেকশন দেখা দেয়। এতে দ্বিতীয় দফায় তাকে আরো একটি অপারেশন  করা হয় দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরই মধ্যে ফুসফুসে পচন ধরে যায় ফলে ৩য় দফায় অস্ত্রোপাচার করে তার ফুসফুস কেটে ফেলা হয়।এভাবে দীর্ঘ প্রায় ২ মাসের অধিক সময় চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। এতে তার নিজের পকেট থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ আগষ্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি খরচে চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন তিনি। আরিফ দুঃখ করে বলেন চিকিৎসাকালিন সময়ে ঢাকা মেডিকেলে আমার পরিবারের লোকজন ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে আসেননি। ২১ জুলাই থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ছিলেন। একটু উন্নতি হলে নিজ বাড়ি ঘাটাইলের শালিয়াবহ গ্রামে আসেন তিনি। এক রাত যেতে না যেতেই পেটে গ্যাস জমে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। পরে ১১ সেপ্টেম্বর এ্যম্বোলেন্সে করে পুনরায় নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি বাড়িতে থাকলেও মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে বেচে আছেন। ডাক্তার বলেছে শঙ্কা মুক্ত নন তিনি সুস্থ্য হতে অনেক সময় লাগবে।আরিফের মা বলেন, আমার নারী ছেড়ে ধন সন্তানটি নিয়ে নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছি আমরা। দুই বেলা আহার যোগার করাই আমাদের জন্য যেখানে ভীষন কষ্ট, সেখানে চিকিৎসার খরচ যোগার করবো কিভাবে। সারা রাত ঘুমাতে পারিনা ছেলেটার বাবা নেই। আমার বয়স হয়েছে চোখেও কম দেখি। ছেলের চিন্তায় আমিও অসুস্থ্য। এভাবে চলতে থাকলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে মরে যেতে হবে। আর কোন উপায় নেই আমাদের।

আরিফ হোসেন অশ্রুসজল কন্ঠে বলেন, আমার পরিবারে মা, নানী, স্ত্রী, সন্তান ও এক ভাই নিয়ে ৬ জনের সংসার। বাঁচা-মরার সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন মতে বেঁচে থাকলেও এই দরিদ্র সংসার চলবে কিভাবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার জীবনে যেন নেমে এসেছে চরম বিপর্যয় আর অন্ধকারের অমানিশা। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। বাবা মারা যাওয়ার পর টিউশনী করে, মানুষের দাঁড়ে দাঁড়ে কাজ করে লেখাপড়ার পাশা পাশি সংসার চালাতাম। এখন কিভাবে চালাবো সংসার। সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সুদৃষ্টি ছাড়া আর যেন কোন গতান্তর নেই আমাদের। ভীষন কষ্ঠে আছি। তিনি বলেন, আমিতো মরেই যাব। কিন্তু মরে গেলেও তো শান্তি নিয়ে মরতে পারছিনা। বৃদ্ধ মা, সন্তান, স্ত্রী, ছোট ভাই ও বৃদ্ধা নানীটাকে কার কাছে রেখে যাব। বড় সাদ জাগে, মরার আগে যদি আমার পরিবারের একটা মাথা গুজাড় ঠাঁই দেখে যেতে পারতাম তাহলে শান্তি নিয়ে মরতে পারতাম কথা গুলো বলে হাও-মাউ করে কাঁদছিলেন হতভাগা আরিফ।

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে টাংগাইল জেলায় যারা শহীদ হয়েছে এবং আহত হয়েছে সরকারি ভাবে তাদের তালিকা করা হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পরিবার কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট কুকি ব্যবহার করে থাকে। Check Now
Ok, Go it!