ছাইদুর রহমান ।।
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এবার জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনার চরাঞ্চলে শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন চাষিরা। কিন্তু বেগুন খেতে যেমন পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে ঠিক টমেটো খেতেও ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘরে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের নান্দিনার চরাঞ্চল ছাড়াও রানাগাছা, শরিফপুর, লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, নরুন্দি, ইটাইল, বাঁশচড়া, শ্রীপুর, রশিদপুর ইউনিয়নের বিস্তুর্ণ জমিতে কৃষকরা শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন।
কৃষকরা জানায়, গত অক্টোবর মাসে খেতে শীতকালীন সবজির চারা রোপন ও বীজ বপন করা হয়েছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে সেই সবজি খেত নষ্ট হয়ে যায়। টানা বৃষ্টির পর অনেক আশা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চাষিরা বেগুন, টমেটো, করলা, চিচিংগা, ঝিংগা, শিম, চাল কুমড়া, মিষ্টি লাউ, বরবটি, লাউ ইত্যাদি আবাদে ঝাপিয়ে পড়েন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই সবজি চাষে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।
কৃষকেরা জানিয়েছেন, চলতি বছর অতিবৃষ্টি ও খরার ফলে চাষকৃত সবজির ক্ষতি হয়। প্রতি বিঘায় ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বেশি দামে সার-কীটনাশক দিয়েও বাগান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। গাছ মরে যাওয়ায় ফলন না আসায় লোকসানে পড়েছেন তাঁরা। এই সময়ে কৃষি বিভাগের কেউ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর সদরের রানাগাছা ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রাম পরিদর্শনে গেছে সবজি চাষি হারেজ আলী জানান, আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। এই সময় গাছে থোকায় থোকায় টমেটো ধরার কথা। কিন্তু টমেটোর ফুল আসার সময় গাছে গাছে প্রষ্ফুটিত গুলোর অর্ধেক শুকিয়ে মরে গেছে। এতে এবার টমেটোর ফলন বিপর্যয় ঘটবে বলে জানান তিনি।
ওই এলাকার সবজি চাষি মোজাফর হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চরে আবাদকৃত সাদা বেগুন ও কালো লম্বা বেগুন এখন খেত থেকে তোলা হচ্ছে। একমণ বেগুন তোলা হলে সেখানে ১০-১৫ কেজির মতো পোকায় খাওয়া ও বাঁকা ত্যাড়া বেগুন বের হয়। সেগুলো বাজারে বিক্রি করা যায় না। পোকা ও এক প্রকার ছত্রাক বেগুন খেতে আক্রমন করেছে। আমরা কীটনাশক ষ্প্রে করেও ভালো ফল পাচ্ছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় আছি।
বারুয়ামারী এলাকার সবজিচাষি লুৎফর রহমান জানান, বাজারে এখন সব ধরনের সবজির দাম ভালো। অনেক আশা নিয়ে আমরা এবার সবজির আবাদ করেছি। কিন্তু পোকা ও ছাত্রাক আমাদের সব শেষ করে দিচ্ছে। ওই এলাকার কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ। সার-কীটনাশকের খরচের পাশাপাশি কামলা দিয়ে কাজ করাতে হয়। খেতে সারা দিনের অর্ধেক ফল ফেলে দিতে হচ্ছে। এবার অনেক টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’
স্থানীয় ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, সারা দেশে জামালপুরের শীতের সবজির চাহিদা রয়েছে। চরাঞ্চলে সবজির বাগান নষ্ট হওয়ায় এবার চাহিদা অনুযায়ী সবজি মিলছে না। এ বছর বর্ষার কারণে ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। ফলে চাহিদা মতো পণ্য তাঁরা জেলার বাইরে পাঠাতে পারছেন না।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জামালপুরে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের সবজিচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্লক সুপারভাইজাররা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাঁদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে সহায়তা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন