ছাইদুর রহমান।।
সন্যাসী খাল। নান্দিনায় যারা বসবাস করছেন তারা প্রায় সবাই এই খালের নাম বলতে পারবেন। নামটি শুনেছেন। জেনেছেন। কোথায় এটি অবস্থিত তাও জানেন।
সন্যাসী খালটি নান্দিনা পশ্চিম বাজার বিদ্যুত অফিস সংলগ্ন বরাবর জায়গায় অবস্থিত। এটির উৎসমুখ ছিল পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে। পশ্চিম বাজার বিদ্যুত অফিস হয়ে নান্দিনা রেললাইন পেরিয়ে পুরাতনপাড়া হয়ে নেকজাহান স্কুলের দক্ষিণপাশ দিয়ে বয়ে গেছে। কিন্তু এ খালের অস্তিত্ব আজ বিলিন। নাম আছে কিন্তু খালটি আজ অস্তিত্ব সংকটে। খালটি সংকোচিত হয়ে আজ সেচ নালায় পরিণত হয়েছে। সন্যাসী খালের সাথে নান্দিনা রেল স্টেশনের হোম সিগন্যাল বরাবরে যে রেলের ব্রিজটি রয়েছে সেটির নাম কিন্তু সন্যাসী ব্রিজ বা (সন্যাসী পুল) নামে পরিচিত।
প্রাচীণকালে এ খালটি এলাকার মানুষ জীবন জীবিকার অন্যতম বাহন হিসেবে বেছে নিত। কেননা খালটির প্রধান উৎসমুখ ছিল পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে। সে কারণে ব্যাপক স্রোতযুক্ত খালে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। পাশাপাশি তৎকালে এই খালে প্রচার ফকির সন্যাসীরা যাযাবরের মত বাস করতেন। সন্যাসীরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
ব্রিটিশ শাসনামলে বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশিক প্রশাসন প্রসার ও তার কুশাসনের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ফকির আন্দোলন ছিল তেমনি একটি উল্লেখ্যযোগ্য সশস্ত্র আন্দোলন। ফকির আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত ফকির মজনু শাহ মস্তান। ফকির সম্প্রদায় ছিল মাদারিয়া সুফী মতাবলম্বী। সন্যাসীরা ছিলেন বেদান্তে দর্শনে মায়াবাদে বিশ্বাসী। সন্যাসীদের মধ্যে ভবানী পাঠক অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। ইংরেজরা যখন করের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখন ফকির সন্যাসীরা সশস্ত্র আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। সে টি অবশ্য ১৭৬০ সন থেকে ১৮০০ সন পর্যন্ত ছিল। ১৭৮৭ সনে ফকির মজনু শাহর মৃত্যু হলে ফকির সন্যাসীদের আন্দোলন স্তিতিমত হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর থেকেই নান্দিনায় এ খালের নামকরণ হয়েছে সন্যাসী খাল।
১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত খালটির প্রশস্তা স্বাভাবিক থাকলেও পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ৭১’ এ দেশ স্বাধীন হবার পর জোরে শোরে সন্যাসী খাল ভরাট হতে থাকে।
গত ১৯৭৯ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নান্দিনায় আসেন। তিনি এসে এই সন্যাসী খালকাটা কর্মসূচী উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে কয়েক বছর এই সন্যাসী খালে পানি থাকলেও ক্রমান্বয় দুইপাশ থেকে ভরাট হতে থাকে। খালের উৎসমুখে বসতবাড়ী নির্মিত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন খালটি জবরদখল করতে শুরু করেন। প্রশস্ততা হ্রাস পেতে পেতে এখন সরু সেচনালায় পরিণত হয়েছে খালটি। তাই এটির অস্তিত্ব এখন বিলিন হবার পথে।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন