। মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল । |
সকলের জন্যই ভালো ও সুন্দর কাজ করা অতীব জরুরি। কেননা, ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানবতা ও মানবিকতার ধর্ম। ইসলাম ধর্মে যে কোনো ভালো কাজ, ভালো কথা ও সুন্দর আচরণকে ইবাদত বলে গণ্য করা হয়েছে।
বলা বাহুল্য, মানুষ সামাজিক জীব, সমাজ জীবনে মানুষকে চলতে হয়, বলতে হয়। প্রয়োজনে একজন অপরজনের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়। এ সময় ভালো কথা বলা, সুন্দর আচরণ করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। ইসলাম তার অনুসারীকে সব সময় সুন্দর আচরণ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছে।
আল্লাহপাক বলেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলবে। (সূরা বাকারা : আয়াত : ৮৩)।
সুন্দর আচরণ, উত্তম ও কল্যাণকর কাজ, ভালো কথা বলা এগুলো আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য। যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ করে এবং নিজের জন্য কিংবা পরের জন্য ভালো কাজ করে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং তার রাসূলের কাছেও প্রিয়।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি)। তিনি আরও বলেন, ‘ভালো কথা সদকাস্বরূপ’। (সুনানে বায়হাকি)।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’ (সুনানে তিরমিজি)।
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো মুখ এবং লজ্জাস্থান।’ (সুনানে তিরমিজি)। তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল। (সহিহ মুসলিম)।
ভালো কাজ বলতে যা বোঝায় তা হলো সব কল্যাণকর কাজ। চাই কাজটি নিজের হোক কিংবা পরের হোক। ইসলামে যে কোনো ভালো কাজকে সদকা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক ভালো কাজই সদকা’। (সহিহ বুখারি : হাদিস : ৬০২১, সুনানে তিরমিজি : হাদিস : ১৯৭০)।
সব মানুষকে ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর সদকা করা কর্তব্য। সাহাবিরা বললেন, যদি তার (আর্থিক) সামর্থ্য না থাকে। নবি করিম (সা.) বললেন, তাহলে সে নিজ কর্মের মাধ্যমে নিজের এবং অপরের সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে এটি করতে সক্ষম না হয় বা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে অসহায় মুখাপেক্ষীকে সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে তা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে অন্যকে ভালো কাজের আদেশ করবে। তারা বললেন, যদি সে তা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, এটিই তার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (সহিহ বুখারি)।
গণমানুষের কল্যাণে অনেক মহৎপ্রাণ ব্যক্তি এমন কিছু কাজ করেন, যা কেবল পার্থিব জগতেই নয় বরং পরকালেও এর প্রতিদান পাওয়া যায়। মানুষের এমন সব কাজ সদকা হিসাবে বিবেচিত হবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের ইন্তেকালের পরও তার যেসব নেক ‘আমল ও নেক কাজের সাওয়াব তার কাছে সব সময় পৌঁছতে থাকবে, তার মধ্যে-(১) ‘ইলম বা জ্ঞান-যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে; (২) নেক সন্তান যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে; (৩) কুরআন যা সে উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে; (৪) মসজিদ যা সে নির্মাণ করে গেছে; (৫) মুসাফিরখানা যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে; (৬) কূপ বা ঝরনা যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং (৭) দান-খয়রাত যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় তার ধন-সম্পদ থেকে দান করে গেছে। মৃত্যুর পর এসব নেক কাজের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছতে থাকবে। (সুনানে ইবনু মাজাহ : হাদিস : ২৪২, সহিহ তারগিব : হাদিস : ৭৭)।
পরিশেষে মহান আল্লাহপাক আমাদের ভালো কাজ ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে সকলকে প্রাত্যহিক ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন