ছাইদুর রহমান \
জামালপুর সদরের প্রাচীন নৌ-বন্দর হিসেবে খ্যাত নান্দিনায় এক সময় সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছিল খুব জমকালো। একটু পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায় বিগত ৫০ দশকের সাংস্কৃতিকর মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল নান্দিনা মহারাণী হেমন্ত কুমারী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। অত্র বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মূল সমন্বয়কারী ছিলেন স্বর্গীয় নলিনী মোহন দাস মাখন বাবু। তাঁর সহযোগি ছিলেন মরহুম আলাউদ্দিন স্যার, মৌলভী সিরাজ উদ্দিন (হাইলা ভাই) প্রমুখ। মৌলভী সিরাজ উদ্দিন তখনকার সময়ে রংপুর থেকে ঐতিহাসিক পুরাতত্ব নামে একটি রম্যরচনা সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে প্রদর্শন করেন। এটি জামালপুর পাবলিক হল মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয়। মরহুম এসএম হুদা স্যার এটি পরিচালনা করেন। নান্দিনা বাজার বাসিন্দা মরহুম গেদু হাজির ছেলে মরহুম শাহজাহান আলী ঐতিহাসিক পুরাতত্ব এ অভিনয় করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। গত ৬০ এর দশকে দড়িহামিদপুর গ্রামের আইজ উদ্দিন, পলাশতলার মরহুম মীর মতিন তালুকদার, কুমুদ দত্ত ওরফে নেতা খলিল নাটকে অভিনয় করে বেশ সুনাম অর্জন করেন। প্রখ্যাত নাট্যকার এসএম হুদা স্যারের লেখা নাটক কালো ছায়া, আকালুর ছেলে, নতুন দিনের আলো, বাবা সম্মেলন ঢাকাস্থ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়িত হয়। দেশের চলচ্চিত্র জগতের শক্তিমান অভিনেতা মরহুম আনোয়ার হোসেন, আমজাদ হোসেন হুদা স্যারের ছাত্র। ৭০ এর দশকে নান্দিনা মডেল একাডেমী রোডের বাসিন্দা ও শিক্ষক মরহুম নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সুরকাকলী নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আত্নপ্রকাশ হয়। নান্দিনা মহারাণী হেমন্ত কুমারী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরহুম গিয়াস স্যার নাটকে অভিনয় করে ঢাকা বিভাগে বিভাগীয় খ্যাতি অর্জন করেন।
নান্দিনা স্কুলের অনেক প্রাক্তনছাত্র আজ দেশে বিদেশে সাংস্কৃতি অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা বাদল রহমান, এ এফ কবির চৌধুরী, খসরু নোমান, বিটিভির নাট্যকার মুনির হাসান চৌধুরী তারা প্রমুখ।
নান্দিনায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আরেক খ্যাতিমান ব্যক্তি স্বর্গীয় সুদেন্দ্র শেখর দেবের নেতৃত্বে গত ৯০ এর দশকে অনুশীলন নামে একটি শিল্পীগোষ্ঠীর আগমন ঘটে। ওই সময়ে নান্দিনা অতি সুপরিচিত সংগীত শিল্পী দ্বিলীপ বাবু ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন নান্দিনা পশ্চিম বাজার বাসিন্দা শ্রদ্ধেয় মরহুম আলাউদ্দিন স্যারের কন্যা সালিমা রাহাত আরা রুবী। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গন, শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসগুলোতে শুরু হয়ে যেতো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। পলাশতলার বাসিন্দা মরহুম মতিন তালুকদারের ছেলে মীর ফরিদ আহমেদ ভালো তবলা বাজাতেন। পলাশতলার মরহুম কাজেম মেম্বার ভালো ও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাঁশি বাজাতেন। নান্দিনাসহ এলাকার কোনো জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে জানতে পেরে তারা ছুটে যেতেন। দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন। গত প্রায় দুইযুগ আগে সংগীত শিল্পী দ্বিলীপ বাবু ভারতে চলে যান। তাছাড়া সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুদেন্দ্র দেবের মৃত্যুর পর সুরকাকলী শিল্পীগোষ্ঠির কার্যক্রমও বর্তমানে আর নেই। নান্দিনাস্থ ৯নং রানাগাছা ইউনিয়ন পরিষদের ঠিক উত্তরপাশে আমরা ক‘জনা নামে একটি সেবা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্ম হয়। নান্দিনার একঝাক তরুণের নেতৃত্বে এই সংগঠন দীর্ঘদিন চলে। নান্দিনা মহারাণী হেমন্ত কুমারী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বিগত ১৯৮৫ সনে ৫০ বছর পূতি (সূবর্ণজয়ন্তী) অনুষ্ঠান করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে আমরা ক‘জনা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ৮৫‘র আমরা ক‘জনা প্রায় এক দশকের মত ভালোভাবেই পরিচালিত হয়। কিন্তু আমরা ক‘জনায় যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা দেশে বিদেশে নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সংগঠনটি ক্রমেই ঝিমিয়ে পড়ে।
সুর মিতালী, ধ্রুব সাংস্কৃতিক সংগঠন, নান্দিনা থিয়েটারের কার্যকম হারাতে বসেছে। নান্দিনা থিয়েটারের ব্যবস্থাপনায় এবং সাইদুর রহমান প্রযোজিত, আব্দুল কাদের ডাকবাবুর কাহিনী নিয়ে জমিলা সুন্দরী নামে একটি ভিডিও টেলিফিল্ম সারাদেশে মুক্তিদেয়া হয়। রণরামপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা তরুণ নাট্যকার লুতফর রহমান সোহেল এর ব্যবস্থাপনায় খায়রুণ বিবি নামে অপর আরেকটি ভিডিও সিডি এবং উজান গাঙের নাইয়া নামে দুটি ভিডিও সিডি নির্মাণ করে বাজারে ছাড়া হয়।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন