জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ও তুলশীরচর ইউনিয়ন দুটিকে জেলা সদরের সাথে আলাদ করে রেখেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও আজো এই দুইচরে কোথাও গড়ে উঠেনি কোনো উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ। যে কারণে প্রতিবেশি এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোর উপর নির্ভর থাকতে হচ্ছে চরের শিক্ষার্থীদের। কলেজ না থাকার কারণে প্রবল ইচ্ছে থাকার পরেও এসএসসি পাশ করার চরের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া বাদ দিয়ে নানাপেশায় জড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া অনেকটা বাধ্য হয়েই নারী শিক্ষার্থীদের অল্প বয়সে বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। এতে উচ্চ শ্রেণীতে লেখাপড়ার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা থেকে বঞ্চিত হওয়া, নারীর ক্ষমতায়নসহ চরের ছাত্রীরা একধাপ পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীরচর ও তুলশীরচর ইউনিয়নে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদরাসা রয়েছে। আর তুলশীরচর ইউনিয়নে ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাশাপাশি শেরপুর সদর উপজেলার ঘুঘুরাকান্দি, বলাইয়েরচরসহ একাধিক ইউনিয়নের অনেকগুলো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কিন্তু এসব এলাকার স্কুল, মাদরাসাগুলো থেকে এসএসসি ও দাখিল পাশ করার পর দুইচরের ছাত্রছাত্রীদের ছুটতে হচ্ছে বহুপথ মাড়িয়ে প্রতিবেশি নান্দিনা, নরুন্দি, জামালপুর ও শেরপুর সদরের ভীমগঞ্জে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে লক্ষ্মীরচর ও তুলশীরচর ইউনিয়নে ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নৌকা, সড়কপথ, বালুপথ, হাঁটাপথ। এপথ পাড়ি দিতে প্রতিদিন অসহায় কৃষক পরিবারের সন্তানদের গুণতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। এরমধ্যে যাদের খরচের টাকা ব্যয়ের সামর্থ নেই, তারা এসএসসির উপরে আর পড়তে না পেরে ঝরে পড়ে। ব্রহ্মমুত্র চরের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক পাশ করার পর মাধ্যমিকে লেখাপড়ার সুযোগ পেলেও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার জায়গা নেই। ফলে তাদের শিক্ষা গ্রহণে বিপাকে পড়তে হয়।
এই দুই চরে শিক্ষার্থীদের চলাচলে বর্ষাকালে সবচেয়ে দুর্ভোগের যেমন সীমা থাকেনা, তেমনী করতে হয় অর্থ ব্যয়। বাড়ি থেকে কলেজে ক্লাস করতে ভাঙ্গাচূড়া সড়কপথ, বালুপথ, নদীপথে নৌকা পাড়ি দিতে হয়। প্রায় প্রতি বছরই ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার সময় ছাত্রছাত্রীদের তো দুর্ভোগের সীমা থাকে না। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের অনেক সময় ঝড়-ঝাপটা, রোদ, বৃষ্টি অতিক্রম করে তাদের লেখাপড়ার জন্য কলেজে যেতে হয়।
চরবাসী জানান দেশ যেখানে সামগ্রীক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের এ এলাকাটা শুধু শিক্ষা ব্যবস্থায় পিছিয়ে আছে। আমাদের অবহেলিত এই দুই চর এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক পাশ পর্যন্ত নিজ এলাকায় থেকে করতে পারছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি ব্রহ্মপুত্র চরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য, কিন্তু আজও সেটা করা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় লক্ষ্মীরচর গ্রামের যুবক শাকিলের সাথে। তিনি জানান চরে আমাদের আপাতত জরুরি একটি উ”চ মাধ্যমিক কলেজের খুব প্রয়োজন। চর আর এখন সেই চর নেই। চরে এখন ইলেক্ট্রিক বাতির আলো জ্বলছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। মানুষের ধ্যান ধারণা, পোষাক, আষাক, চলনে বলনে, কথাবার্তাসহ সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু কলেজ না থাকায় চরের বহু শিক্ষার্থী আজ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে ঝরে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বারুয়ামারী এলাকার কলেজ ছাত্র রুবেল, মহসীন, শান্তা জানান চরে আমরা অবশ্যই কলেজ চাই। এটা আমাদের বর্তমান সময়ের দাবি। স্থানীয় একাধিক সুধীজনের সাথে কথা হলে তারা জানান এখানে একটি স্বতন্ত্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ৩ বিঘা জমির। আগে আমাদের এই পরিমান জমি কলেজের নামে লিখে দিতে হবে। এরপর শুরু হবে নানা আনুষাঙ্গিক কর্মকান্ড। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা জমি অধিগ্রহণ করতে পারিনি।
প্রসঙ্গক্রমে লক্ষ্মীরচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বিদ্যুত বলেন চরে কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি আমরা। লক্ষ্মীরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সমাজসেবক হাতেম আলী তারার সাথে। তিনি বলেন, লক্ষ্মীরচরে একটা কলেজ খুব জরুরি।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন