\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \ |
যে কোন মূল্যে স্মার্ট ফোনের কবল থেকে আমাদের শিশুদের রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে তথ্য আদান-প্রদানে স্মার্টফোন বদলে দিয়েছে শহর ও গ্রামের মানুষের জীবন। পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগমাধ্যম হিসাবে মোবাইল ফোন কার্যত বিপ্লব ঘটিয়েছে। এ ডিভাইস কয়েক সেকেন্ডেই পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেয়, একটি জাতির সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি দুটি বিষয়ই অন্য একটি জাতির সঙ্গে সহজেই পরিচয় করিয়ে দেয়। বর্তমানে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন মানুষের যাপিত জীবনের অতি প্রয়োজনীয় একটি অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় এ স্মার্টফোনের অপব্যবহার দেশের নতুন প্রজন্মকে যেন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শিশু ও তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে স্মার্টফোনের অপব্যবহার করছে। চলতি বছর শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তি নিয়ে জাবির একদল গবেষক তিন থেকে পাঁচ বছরের ৪০০ প্রি-স্কুল শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালায়। এতে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত। এদের মধ্যে ২৯ শতাংশের মারাত্মকভাবে স্মার্টফোনের আসক্তি রয়েছে। আরও দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ৪ জনই সন্তানের স্মার্টফোন আসক্তি সম্পর্কে অবগত নন। গবেষণায় আসক্তির কারণ হিসাবে দেখা গেছে মূলত সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের সময় না কাটানো, খেলার মাঠের অভাব, খেলার সাথীর অভাব, স্মার্টফোনে কার্টুন দেখা, স্মার্টফোনে গেম খেলা ইত্যাদি। অন্যদিকে মাত্র ১৪ শতাংশ শিশু অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। অভিভাবকরা মূলত শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেন তাদের ব্যস্ত রাখতে, যাতে অভিভাবকরা তাদের কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন; কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন না, বাচ্চাদের কত বড় ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্মার্টফোন আসক্তিতে বাচ্চাদের ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন, কারণ ছাড়াই রেগে যাওয়া, অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিত ঘুম, অমনোযোগিতা, ভুলে যাওয়া, ভাষার দক্ষতা বিকাশ না হওয়া এবং ভাইবোন, বাবা-মা ও খেলার সাথীদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাসহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়। একই সঙ্গে এ গবেষণায় অনেক রকম শারীরিক সমস্যার কথাও উঠে এসেছে। যেমন স্মার্টফোনে আসক্ত বাচ্চারা সচরাচর মাথাব্যথা, হাত ও পিঠে ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস, অনিয়মিত খাওয়ার প্রবণতা, ওজন ও উচ্চতার অসামঞ্জস্যপূর্ণতা এবং শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তির সমস্যায় ভুগছে। এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় ৩ গুণ।
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তারা নিজেদের সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলবে। ঘরকুনো স্বভাবের হয়ে যাবে। পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো কিভাবে অটুট রাখতে হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো শিখে উঠতে পারবে না। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের দূরত্বের সৃষ্টি হবে। তাই অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনার সন্তানের হাতে ফোন না তুলে দিয়ে তাকে সময় দিন। মোবাইল গেম বাদ দিয়ে নিজেরা তাদের সঙ্গে খেলুন। সন্তানকে মোবাইল, ট্যাব এবং টিভির ভার্চুয়াল বিনোদন না দিয়ে ন্যাচারাল কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। তাদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।
যদি পড়াশোনার জন্য শিশুদের স্মার্টফোন দিতেই হয়, তাহলে যতক্ষণ তারা স্মার্টফোনের সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ আপনিও তাদের সঙ্গে থাকুন। স্মার্টফোনে পড়াশোনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় তৈরি করুন। অভিভাবকদেরও স্মার্টফোন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অনেক অভিভাবক নিজেরাই স্মার্টফোনে আসক্ত। আপনার অবহেলায় আপনার শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকার না হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় পর্যায়ে শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তির বিষয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন এবং তার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রি-স্কুল বাচ্চাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি নির্দেশনাবলি তৈরি করে সেই অনুযায়ী কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। তাই এ বিষয়ে অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন