জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী মজাদার খাবার

মোঃ সাইদুর রহমান সাদী
0



মোঃ সাইদুর রহমান সাদী \

জামালপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মজাদার খাবারের প্রচলন রয়েছে। এখানকার স্থানীয় খাবারগুলো সাধারণত গ্রামের স্বাদে এবং লোকজ রীতিনীতিতে প্রভাবিত। জামালপুরের কিছু জনপ্রিয় মজাদার খাবার হলো:

চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা : শীতকালে জামালপুরে চিতই ও ভাপা পিঠা খুবই জনপ্রিয়। নারকেল, গুড় বা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি এসব পিঠা সাধারণত সকালের নাস্তায় বা বিকেলের খাবারে উপভোগ করা হয়।

মুড়ি ও চিড়ার মুড়কি : মুড়ি ও চিড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের মুড়কি (মিষ্টান্ন) এখানকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। গুড়ের সাথে মুড়ি বা চিড়া মিশিয়ে এই মিষ্টি তৈরি করা হয়, যা বিশেষ উৎসবে খাওয়া হয়। 

খেজুরের রসের পায়েস : শীতকালে জামালপুরে খেজুরের রস পাওয়া যায়, যা দিয়ে সুস্বাদু পায়েস তৈরি করা হয়। খেজুরের রস, দুধ, চিনি ও চাল মিশিয়ে এই মিষ্টি খাবারটি বানানো হয়।

গরুর মাংসের ভুনা : জামালপুরের একটি বিশেষ খাবার হলো গরুর মাংসের ভুনা। এটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ।

মাসকলাইয়ের ডাল : মাসকলাইয়ের ডাল জামালপুরের একটি বিশেষ স্থানীয় খাবার। এটি ভাতের সাথে খুবই জনপ্রিয়, বিশেষ করে শীতকালে।

নকশি পিঠা : জামালপুরের আরও একটি মিষ্টি পিঠা হলো নকশি পিঠা, যা দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে তেমনই মজাদার। এটি বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।

মাছের ভর্তা ও ভাজা : যমুনা নদীর কাছাকাছি থাকায় জামালপুরে বিভিন্ন নদীর মাছও সহজলভ্য। এখানে মাছের ভর্তা এবং ভাজা বেশ জনপ্রিয়। জামালপুরের এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো ভ্রমণকারীদের জন্য এক ভিন্ন রকমের স্বাদ নিয়ে আসে, যা স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে।

জামালপুরে আরও অনেক মজাদার এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, যা স্থানীয়দের পাশাপাশি ভ্রমণকারীদের মাঝেও বেশ জনপ্রিয়। কিছু অতিরিক্ত খাবার হলো:

বিন্নি চালের পোলাও : বিন্নি চাল জামালপুরের একটি বিশেষ ধরণের চাল, যা দিয়ে পোলাও রান্না করা হয়। এটি বিশেষ উপলক্ষে যেমন বিয়ে বা ধর্মীয় উৎসবে পরিবেশন করা হয়। এর সুগন্ধ এবং নরম টেক্সচার একে আলাদা করে তোলে।

মাটির হাঁড়িতে রান্না করা মাছ : জামালপুরে মাটির হাঁড়িতে রান্না করা মাছের প্রচলন রয়েছে। মাটি দিয়ে বানানো হাঁড়িতে ধীর আঁচে রান্না করলে মাছের স্বাদ আরও বাড়ে, এবং এই পদ্ধতিতে তৈরি করা মাছ জামালপুরে বেশ জনপ্রিয়।

খাসির মাংসের ঝালভুনা : খাসির মাংসের ঝালভুনা জামালপুরের একটি জনপ্রিয় মসলাদার খাবার। বিভিন্ন ধরণের মসলা ব্যবহার করে একে ভুনা করা হয়, এবং এটি ভাত বা রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়।

পানতোয়া ও রসগোল্লা : মিষ্টির মধ্যে জামালপুরের পানতোয়া ও রসগোল্লা বিখ্যাত। এই মিষ্টিগুলো স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকদের হাতে তৈরি হয়, যা স্বাদে অনন্য এবং খেতে খুবই সুস্বাদু।

ঝালমুড়ি : ঝালমুড়ি জামালপুরের একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড। মুড়ি, বাদাম, মসলা, শসা, কাঁচা মরিচ এবং তেল মিশিয়ে তৈরি এই খাবারটি বিকেলের খাবারের জন্য খুবই উপযুক্ত। এটি হালকা ও ঝাল স্বাদের জন্য জনপ্রিয়।

পাটিসাপটা পিঠা : জামালপুরের পাটিসাপটা পিঠা একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা, যা সাধারণত খেজুরের গুড় এবং নারকেলের পুর দিয়ে বানানো হয়। এটি শীতকালে বিশেষত পৌষ পার্বণের সময় বেশি খাওয়া হয়।

তিলের নাড় : তিলের নাড়ু জামালপুরের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খাবার, যা মূলত মাঘ মাসে তৈরি করা হয়। গুড় ও তিল মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয় এবং শীতকালে এর চাহিদা বেশি থাকে।

চিংড়ি মাছের মালাইকারি : চিংড়ি মাছ দিয়ে বানানো মালাইকারি জামালপুরে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। নারকেলের দুধ দিয়ে তৈরি এই রান্না ভাতের সাথে বেশ উপভোগ্য।

নকশিকাঁথা কেক : জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী “নকশি কাঁথা” কেক সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটি দেখতে নকশিকাঁথার মতো সুন্দর এবং স্বাদেও অনন্য। বিভিন্ন নকশার মাধ্যমে তৈরি এই কেকটি স্থানীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কচু শাক ও চিংড়ি ভর্তা : জামালপুরে কচু শাক দিয়ে তৈরি চিংড়ি ভর্তা একটি গ্রামীণ জনপ্রিয় খাবার। স্থানীয় মসলার সাথে এই ভর্তা ভাতের সাথে খুবই মুখরোচক। জামালপুরের এই সব খাবারগুলোই স্থানীয় ঐতিহ্য এবং স্বাদকে বহন করে, যা ভোজনরসিকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়।

জামালপুরের খাদ্য সংস্কৃতি ভীষণ সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়। স্থানীয় লোকজ ঐতিহ্য, প্রকৃতির প্রাচুর্য, এবং ভিন্নধর্মী উপাদানের সংমিশ্রণে আরও কিছু মজাদার খাবার রয়েছে যা এখানকার গুণী মানুষদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। আরো কিছু উল্লেখযোগ্য খাবার:

নান রুটি এবং খাসির রেজালা : জামালপুরের কিছু এলাকায় নান রুটি এবং খাসির রেজালা বেশ জনপ্রিয়। রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে এই খাবারটি পরিবেশন করা হয়। খাসির রেজালায় দই এবং মশলার অনন্য মিশ্রণ রুটির সাথে খেতে দারুণ লাগে।

পোড়া মাছ (মাছের ভাঁপা) : নদীঘেঁষা এলাকা হওয়ার কারণে জামালপুরে পোড়া বা ভাঁপা মাছ একটি বিশেষ রেসিপি। সরষে, লেবু, এবং মসলার সাথে মাখিয়ে মাটির হাঁড়িতে ধীরে ধীরে পোড়ানো হয়। এতে মাছের সুগন্ধ এবং স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়।

আলু ভর্তা ও বেগুন ভর্তা : জামালপুরে বাঙালি ঐতিহ্য অনুযায়ী নানা ধরনের ভর্তার প্রচলন রয়েছে। তার মধ্যে আলু ভর্তা এবং বেগুন ভর্তা সবচেয়ে প্রচলিত। সরষের তেল, কাঁচা মরিচ, এবং পেঁয়াজ দিয়ে মাখানো এই ভর্তাগুলো ভাতের সাথে খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।

কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি : জামালপুরের কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি স্থানীয়দের মাঝে খুব জনপ্রিয়। এই ছোট মাছটি সাধারণত সরষে দিয়ে রান্না করা হয় এবং এটি ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

পাটালির সন্দেশ : পাটালি গুড় দিয়ে বানানো সন্দেশ জামালপুরের একটি সুস্বাদু মিষ্টি। শীতকালে পাটালি গুড় পাওয়া যায়, এবং এর স্বাদযুক্ত সন্দেশ অনেক জনপ্রিয়, বিশেষত বিভিন্ন উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে।

চিড়ার পোলাও : জামালপুরে চিড়া দিয়ে পোলাও বানানোর একটি ঐতিহ্য রয়েছে। এটি একটি হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার, যা নাশতার সময় খাওয়া হয়। বিভিন্ন সবজি এবং মশলা দিয়ে এই পোলাও তৈরি করা হয়, যা অত্যন্ত মুখরোচক।

মসুর ডালের বড়া : মসুর ডালের বড়া জামালপুরে বিশেষ জনপ্রিয় একটি খাবার। মসুর ডাল মিহি করে গুঁড়িয়ে এতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা মিশিয়ে বড়া তৈরি করা হয়। এটি চা বা বিকেলের নাশতার সাথে খেতে বেশ মজা।

সরিষার তেলে ইলিশ ভাজা : ইলিশ মাছ জামালপুরের কাছে যমুনা নদীর জন্যও সহজলভ্য। সরিষার তেলে ভাজা ইলিশ এখানকার অন্যতম প্রিয় খাবার, যা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। ইলিশের সুগন্ধ এবং সরিষার তেলের স্বাদ একে বিশেষ করে তোলে।

ঘাল (বাটারমিল্ক) : গ্রীষ্মকালে জামালপুরে ঘোল একটি জনপ্রিয় পানীয়। এটি টক দই ও পানির মিশ্রণে তৈরি হয়, এবং এতে একটু লবণ ও চিনি মেশানো হয়। গরমের দিনে এটি শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখে।

কলা ভাজা : কলা ভাজা বা পাকা কলা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ভাজা এখানে প্রচলিত। মশলা মাখিয়ে এই কলা ভাজার স্বাদ অত্যন্ত মজাদার হয় এবং এটি স্থানীয় স্ন্যাকস হিসেবে বেশ প্রচলিত। জামালপুরের খাবার শুধু স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নয়, বরং এ অঞ্চলের মানুষদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী পরিচয়ের অংশও। খাবারের বৈচিত্র্যতা ও মৌলিক স্বাদের জন্য জামালপুরের খাবারগুলো বিশেষভাবে প্রশংসিত।

জামালপুরের খাদ্য সংস্কৃতি এতটাই সমৃদ্ধ যে সেখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। আরও কিছু উল্লেখযোগ্য খাবার জানি:

গুড়ের চিড়া : গুড়ের সাথে চিড়া মিশিয়ে তৈরি করা এই মিষ্টি খাবারটি জামালপুরের স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এটি বিশেষ করে শীতকালে সকালের নাস্তায় খাওয়া হয়। গুড়ের মিষ্টি স্বাদ চিড়ার সাথে মিশে এক অসাধারণ টেক্সচার তৈরি করে।

দুধ-চিড়া : দুধ-চিড়া জামালপুরের একটি বিশেষ খাবার, যা সহজেই তৈরি করা যায় এবং বিশেষ করে উৎসবে বা অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশন করা হয়। ঠান্ডা দুধের সাথে চিড়া মিশিয়ে, তার উপর গুড়, কলা বা বিভিন্ন মিষ্টি ফল যোগ করা হয়, যা এই খাবারকে অনন্য করে তোলে।

মাছের মুড়িঘন্ট : মাছের মাথা দিয়ে তৈরি মুড়িঘন্ট জামালপুরের একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি মূলত মাছের মাথা দিয়ে মশলাদার খিচুড়ি ধরনের খাবার, যা ভাতের সাথে খাওয়া হয়। এর বিশেষ স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য এটি অনন্য।

চাপটি কাবাব : চাপটি কাবাব জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে একটি। মাংসের কিমা এবং মশলা মিশিয়ে তৈরি এই কাবাবগুলি আগুনে বা তেলে ভাজা হয়, এবং এটি রুটি বা পরোটার সাথে খাওয়া হয়।

গুড়ের পিঠা : জামালপুরের গুড়ের পিঠা খুবই প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে শীতকালে এই পিঠার চাহিদা বেড়ে যায়। ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠায় খেজুরের গুড়ের ভেতরের পুর এবং নারকেলের স্বাদ একে মজাদার করে তোলে।

লাউ শাক ও শুঁটকি : জামালপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী সবজির খাবার হলো লাউ শাক দিয়ে শুঁটকি মাছের রান্না। এটি একটি মশলাদার এবং সুস্বাদু খাবার, যা সাধারণত ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।

টমেটো চাটনি : জামালপুরের বিভিন্ন উৎসব বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে টমেটো চাটনি একটি সাধারণ খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। পাকা টমেটো, গুড়, কাঁচা মরিচ ও মশলা দিয়ে তৈরি এই চাটনি ভোজনের শেষে মিষ্টি ও ঝালের মিশ্র স্বাদ নিয়ে আসে।

পাটিসাপটা পিঠা : পাটিসাপটা পিঠা জামালপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পিঠা। এর ভেতরে নারকেল ও গুড়ের মিষ্টি পুর থাকে, আর উপরে থাকে ময়দার মিহি আস্তরণ। পৌষ পার্বণ বা বিশেষ উৎসবগুলোতে এই পিঠা বানানো হয়।

মিষ্টি দই : জামালপুরের মিষ্টি দই খুবই বিখ্যাত। স্থানীয়ভাবে তৈরি দই মিষ্টি ও খেতে দারুণ ক্রিমি হয়। এই দই মিষ্টি ও মিষ্টান্ন হিসেবে পরিবেশন করা হয়।

মুগ ডালের বড়া : মুগ ডাল ভিজিয়ে মিহি করে পিষে বড়া তৈরি করা হয়। এই বড়াগুলোকে সরষের তেলে ভেজে তৈরি করা হয়, এবং এটি বিকেলের নাস্তায় বা স্ন্যাকস হিসেবে পরিবেশিত হয়।

গুড়ের সন্দেশ : খেজুরের গুড় এবং ছানা দিয়ে তৈরি গুড়ের সন্দেশ জামালপুরের মিষ্টান্নগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। এটি ছোট ছোট আকারে তৈরি করা হয় এবং শীতকালে এর চাহিদা বেড়ে যায়।

খেজুর রসের চা : শীতকালে জামালপুরের এক অনন্য পানীয় হলো খেজুর রসের চা। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি এই চায়ের স্বাদ ভিন্ন এবং শীতের সকালে এটি বেশ প্রশান্তিদায়ক।

মশলাদার মুড়ি : মুড়ি জামালপুরে বহুল জনপ্রিয় একটি খাদ্যবস্তু। স্থানীয় মশলা, সরষের তেল, পেঁয়াজ, ধনেপাতা ও মরিচ দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে পরিবেশন করা হয়, যা হালকা খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। জামালপুরের এই ধরনের মজাদার এবং বৈচিত্র্যময় খাবারগুলি সত্যিই স্থানীয় খাদ্য সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ পরিচয় বহন করে।

জামালপুরের খাদ্য সংস্কৃতির আরও কিছু অজানা মজাদার খাবার রয়েছে, যা স্থানীয় মানুষদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ এবং উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন আরো কিছু চমৎকার খাবারের কথা জানি:

বড়ই ভর্তা : বড়ই (বরই) জামালপুরে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। এর টক-মিষ্টি স্বাদে ভর্তা তৈরি করা হয়। তাজা বড়ই, লবণ, কাঁচা মরিচ, সরষের তেল দিয়ে তৈরি করা এই ভর্তা একটি মুখরোচক স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া হয়।

পান্তা ভাত : পান্তা ভাত জামালপুরসহ পুরো বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। গরমের দিনে ভাতকে পানি দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পান্তা তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, এবং ভাজা মাছের সাথে খাওয়া হয়।

সজনে ডাঁটার তরকারি : সজনের ডাঁটা দিয়ে তৈরি করা তরকারি জামালপুরের গ্রামীণ রান্নায় খুবই জনপ্রিয়। এতে আলু, বেগুন, ও অন্যান্য শাকসবজি মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ভাতের সাথে খেতে বেশ সুস্বাদু।

বোঁদা : বোঁদা মিষ্টান্নের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার যা জামালপুরের মিষ্টি দোকানে সহজেই পাওয়া যায়। এটি মূলত বেসন দিয়ে তৈরি ছোট মিষ্টি বল, যা চিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়।

কুমড়োর মোরব্বা : কুমড়ো দিয়ে তৈরি মিষ্টি মোরব্বা জামালপুরের অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টি। এটি তৈরি করতে কুমড়োকে পাতলা স্লাইস করে চিনির সিরায় সিদ্ধ করা হয়, যা খুবই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।

টাকি মাছের শুঁটকি ভর্তা : টাকি মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়, এবং তা দিয়ে মশলাদার ভর্তা তৈরি করা হয়। এই ভর্তা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয় এবং এর গন্ধ ও স্বাদ বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

পাটিসাপটা : পাটিসাপটা পিঠা জামালপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পিঠা। ময়দার আস্তরণ দিয়ে বানানো এই পিঠার ভেতরে নারকেল ও গুড়ের মিষ্টি পুর থাকে। এটি পৌষ পার্বণ বা মাঘ মাসে বিশেষত খাওয়া হয়।

বাঁধাকপির বড়া : বাঁধাকপি কেটে তার সাথে ময়দা, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ মিশিয়ে ভেজে বাঁধাকপির বড়া তৈরি করা হয়। এটি বিকেলের নাস্তায় বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার।

চাপড়া : চাপড়া একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার যা গুড় এবং চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মূলত উৎসব ও পার্বণকেন্দ্রিক খাবার। চাপড়া দেখতে পাতলা এবং খেতে মিষ্টি।

লাউ এর ডালনা : জামালপুরে লাউ এর ডালনা খুবই জনপ্রিয়। লাউয়ের টুকরো, নারকেল ও মশলা দিয়ে তৈরি এই তরকারি ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয় এবং এটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু।

কুমড়ো ফুলের বড়া : কুমড়ো ফুলের বড়া জামালপুরের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। কুমড়ো ফুল ময়দা, বেসন এবং মশলা মিশিয়ে তেলে ভেজে বড়া তৈরি করা হয়। এটি ভাজা খাবার হিসেবে বেশ পরিচিত।

মোচার ঘন্ট : কাঁচা কাঁঠালের মোচা দিয়ে তৈরি ঘন্ট জামালপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী শাকসবজির খাবার। মোচা, নারকেল, এবং মশলা দিয়ে তৈরি এই খাবারটি ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

নারকেলের নাড়ু : শীতকালে জামালপুরের ঘরে ঘরে নারকেলের নাড়ু তৈরি হয়। নারকেল, গুড় ও চিনি মিশিয়ে এই মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়, যা সাধারণত পৌষ পার্বণ বা অন্যান্য উৎসবে খাওয়া হয়।

চমচম : যদিও চমচমের মূল উদ্ভব টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ি থেকে, জামালপুরের চমচমও বেশ জনপ্রিয়। এর সুমিষ্ট ও নরম টেক্সচার এটি স্থানীয়দের প্রিয় মিষ্টির তালিকায় রেখেছে।

গজা : গজা মিষ্টি জামালপুরের আরেকটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ময়দার তৈরি এই মিষ্টি খাস্তা ও চিনির সিরায় ভেজানো থাকে, যা স্থানীয় দোকানে সহজেই পাওয়া যায়। জামালপুরের এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী ও বৈচির্ত্যময় খাবারগুলি স্থানীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি খাবারই এখানে প্রাচীন রীতি ও খাদ্য অভ্যাসের গল্প বলে, এবং খাবারের মাধ্যমে এখানকার মানুষজন তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।

জামালপুরের খাদ্য সংস্কৃতির আরও বৈচিত্র্যময় ও মজাদার খাবারের তালিকা জানাতে আমি আরও কিছু খাবারের উল্লেখ করছি, যা এখানকার মানুষের ঐতিহ্য এবং স্বাদের প্রতিফলন ঘটায়:

সিঙারা ও সমুচা : জামালপুরের সিঙারা এবং সমুচা খুবই জনপ্রিয় স্ন্যাকস। এই খাবারগুলো বিভিন্ন সবজি, মাংস বা ডাল দিয়ে ভরা হয় এবং তা তেলে ভেজে খাওয়া হয়। বিকেলের নাস্তায় গরম সিঙারা ও সমুচা চায়ের সাথে পরিবেশন করা হয়।

মালপোয়া পিঠা : মালপোয়া জামালপুরের আরেকটি বিখ্যাত পিঠা। দুধ, ময়দা, এবং চিনির মিশ্রণে তৈরি করা এই পিঠা গরম তেলে ভেজে পরিবেশন করা হয়। এটি সাধারণত মিষ্টি ও নরম হয়ে থাকে এবং বিশেষ করে রমজান মাসে খুবই জনপ্রিয়।

খেজুর গুড়ের সন্দেশ : শীতকালে জামালপুরে খেজুরের গুড়ের বিশেষ স্বাদযুক্ত সন্দেশ পাওয়া যায়। ছানা ও খেজুর গুড়ের মিশ্রণ থেকে তৈরি এই মিষ্টান্নটি মজাদার এবং শীতের সময় এটি বেশ জনপ্রিয়।

মাংসের কোপ্তা : মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি কোপ্তা জামালপুরে একটি প্রচলিত খাবার। এটি মশলা দিয়ে মাখিয়ে ছোট বলের আকারে তৈরি করা হয় এবং তারপর ভাজা বা গ্রেভিতে রান্না করা হয়। এটি ভাত বা রুটির সাথে খাওয়া হয়।

ঝাল চিড়া : চিড়া জামালপুরে শুধু মিষ্টি হিসেবে নয়, ঝাল চিড়া হিসেবেও খাওয়া হয়। ভাজা চিড়ার সাথে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা এবং সরষের তেল মিশিয়ে ঝাল চিড়া তৈরি করা হয়। এটি বিকেলের খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

মাংসের ভুনা খিচুড়ি : জামালপুরে ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে মাংসের ভুনা একটি বিশেষ খাবার। মাংসের বিশেষ মশলায় ভুনা করা মাংস খিচুড়ির সাথে পরিবেশন করা হয়, যা অত্যন্ত মজাদার।

ডালপুরি : ডালপুরি জামালপুরের একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি ময়দার পুরি, যার ভেতরে ডালের পুর থাকে। ভাজার পর এটি সরাসরি খাওয়া যায় বা চাটনি, তরকারির সাথে পরিবেশন করা হয়।

কাঁচা কলার কোফতা : কাঁচা কলা দিয়ে তৈরি কোফতা জামালপুরে একটি বিশেষ খাবার। কাঁচা কলা মশলা দিয়ে মাখিয়ে ছোট বলের মতো বানিয়ে তা ভেজে রান্না করা হয়। এটি সাধারণত ভাত বা রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়।

পুঁই শাক চিংড়ি : পুঁই শাক এবং চিংড়ি দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় তরকারি হলো পুঁই শাক চিংড়ি। এটি মশলা দিয়ে রান্না করা হয় এবং ভাতের সাথে খাওয়া হয়। এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ দুটিই অনেক বেশি।

শোল মাছের ঝোল : শোল মাছ জামালপুরের স্থানীয় মাছের মধ্যে অন্যতম। এটি সরষে এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। ভাতের সাথে শোল মাছের ঝোল খাওয়া বেশ জনপ্রিয়।

লাল শাক ভাজি : লাল শাক ভাজি জামালপুরের একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি তেল, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভেজে তৈরি করা হয় এবং ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

মাংসের চাপ : মাংসের চাপ বা গ্রিলড মাংস জামালপুরের একটি বিশেষ খাবার। এটি মশলায় মাখিয়ে গ্রিল করা হয় এবং সাধারণত নান রুটি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করা হয়।

সর্ষে ইলিশ : ইলিশ মাছ জামালপুরে সহজলভ্য এবং সর্ষে ইলিশ এখানকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সর্ষের পেস্ট ও অন্যান্য মশলা দিয়ে রান্না করা ইলিশ মাছ ভাতের সাথে খুবই জনপ্রিয়।

নারকেল মালাইকারি : নারকেলের দুধ দিয়ে মুরগি বা চিংড়ির মালাইকারি জামালপুরের আরেকটি বিখ্যাত খাবার। এটি মশলাদার এবং ক্রিমি স্বাদের জন্য বেশ জনপ্রিয়।

পাটালি গুড়ের মিষ্টি দই : জামালপুরের শীতকালে পাটালি গুড়ের মিষ্টি দই একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এই দই-এর স্বাদ অত্যন্ত মিষ্টি এবং এটি শীতের সকালে খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। এই বৈচিত্র্যময় খাবারগুলো জামালপুরের গুণগত মান, স্বাদ ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়। এখানকার মাটির গন্ধ ও মানুষের সংস্কৃতির প্রতিটি খাবারের মধ্যেই ধরা পড়ে, যা এখানকার বাসিন্দাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জামালপুরের খাবার সংস্কৃতির আরও কিছু বিশেষ ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা জানাই যা স্থানীয়ভাবে বিখ্যাত এবং অনন্য স্বাদ নিয়ে এসেছে:

মাছের টক : জামালপুরের মাছের টক একটি জনপ্রিয় খাবার। টক দই, টমেটো ও সর্ষের তেলে রান্না করা এই খাবারটি বিশেষ করে ইলিশ মাছ বা রুই মাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয় এবং এর স্বাদ মিষ্টি ও টক মশলার মিশ্রণ।

আলু পটলের দম : আলু ও পটল দিয়ে তৈরি এই মশলাদার তরকারি জামালপুরের ঘরে ঘরে প্রচলিত। পেঁয়াজ, রসুন ও গরম মশলার সাথে দম করে রান্না করা এই খাবারটি ভাত বা রুটির সাথে খাওয়া হয়।

বাঁধাকপির তরকারি : শীতকালে বাঁধাকপি জামালপুরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বাঁধাকপি দিয়ে সরষে তেল, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ মিশিয়ে সুস্বাদু তরকারি তৈরি করা হয়, যা ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

মটর ডালের চচ্চড়ি : মটর ডাল দিয়ে তৈরি এই বিশেষ চচ্চড়ি জামালপুরে বেশ জনপ্রিয়। এতে আলু, বেগুন, কুমড়োসহ নানা শাকসবজি মিশিয়ে রান্না করা হয়, যা ভাত বা রুটির সাথে পরিবেশন করা হয়।

পেঁপে শুক্তো : পেঁপে ও অন্যান্য সবজি দিয়ে তৈরি এই হালকা মশলাদার শুক্তো জামালপুরে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি খাবার। এটি সাধারণত ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

পিয়াজু : জামালপুরে রমজান বা বিশেষ কোনো উৎসবের সময় পিয়াজু একটি অপরিহার্য স্ন্যাকস। ডাল ও পেঁয়াজ মিশিয়ে তৈরি এই ভাজা খাবারটি অত্যন্ত মশলাদার ও সুস্বাদু।

লাউ চিংড়ি : লাউ ও চিংড়ি মাছ দিয়ে তৈরি এই মশলাদার তরকারি জামালপুরের বিখ্যাত একটি খাবার। এতে সরষে বাটা, কাঁচা মরিচ, ও অন্যান্য মশলা ব্যবহার করা হয়, যা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।

চিকেন বা মাটনের কালিয়া : কালিয়া একটি মশলাদার ও গ্রেভি ধরনের খাবার, যা মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। চিকেন বা মাটনের কালিয়া জামালপুরে উৎসব এবং অতিথি আপ্যায়নের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।

ডাল ভর্তা : মসুর বা মুগ ডাল সেদ্ধ করে ভর্তা তৈরি করা হয়, যা জামালপুরে সাধারণত সরষের তেল, কাঁচা মরিচ, এবং পেঁয়াজ দিয়ে মাখানো হয়। এটি ভাতের সাথে অত্যন্ত সুস্বাদু।

মুগ ডালের খিচুড়ি : মুগ ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি জামালপুরের সাধারণ কিন্তু জনপ্রিয় খাবার। এটি মাংস, মাছ বা ডিমের সাথে খেতে খুবই মজাদার এবং বেশ পুষ্টিকর।

চাল ভাজা : চাল ভাজা জামালপুরের একটি সাধারণ খাবার, যা বিশেষ করে সকালের নাস্তায় খাওয়া হয়। ভাজা চালের সাথে সামান্য লবণ, চিনি বা দই মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।

সিদোল ভর্তা : সিদোল (শুঁটকি মাছ) দিয়ে তৈরি ভর্তা জামালপুরের একটি অনন্য খাবার। এটি মশলা দিয়ে মাখিয়ে ভর্তা তৈরি করা হয় এবং ভাতের সাথে খাওয়া হয়। 

লেবু আচার : জামালপুরের লেবু আচার বিশেষ করে বিখ্যাত। টক-মিষ্টি স্বাদের এই আচার ভাত, রুটি বা পরোটার সাথে খাওয়া হয়।

দুধ পিঠা : শীতকালে জামালপুরে দুধ পিঠা তৈরি করা হয়। চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা বানিয়ে তা গরম দুধে ভিজিয়ে পরিবেশন করা হয়। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।

শোল মাছের কোরমা : শোল মাছ দিয়ে মশলাদার কোরমা জামালপুরের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। মশলার সাথে এই মাছটি রান্না করে ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।

চালতা আচার : চালতা ফল দিয়ে তৈরি আচার জামালপুরের একটি জনপ্রিয় খাবার। এর টক-মিষ্টি স্বাদ এবং দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ ক্ষমতার জন্য এটি ভোজনরসিকদের প্রিয়।

গজা : জামালপুরের গজা মিষ্টি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। এটি ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয় এবং চিনির সিরায় ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়, যা খেতে বেশ খাস্তা।

আনারসের চাটনি : জামালপুরের আনারসের চাটনি মিষ্টি ও টক স্বাদের একটি বিশেষ খাবার। এটি ভাত বা নানারকম ভর্তার সাথে পরিবেশন করা হয়।

শীতল পায়েস : শীতল পায়েস জামালপুরের একটি বিশেষ খাবার, যা দুধ, চাল ও গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়। শীতকালে এই মিষ্টান্নটি খুবই জনপ্রিয়।

পানিভাত : জামালপুরের পানিভাত একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সারা রাত ভেজানো ভাতের সাথে সরষের তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ মিশিয়ে এটি খাওয়া হয়, যা সাধারণত গ্রীষ্মকালে জনপ্রিয়। জামালপুরের এই ঐতিহ্যবাহী এবং স্থানীয় খাবারগুলো এখানকার মানুষের জীবনধারার অংশ। প্রতিটি খাবারই এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক ধারা তুলে ধরে।

জামালপুরের খাদ্য সংস্কৃতি এতই সমৃদ্ধ যে আরও অনেক মজাদার ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম শেয়ার করা যায়। আসুন আরও কিছু সুস্বাদু খাবার সম্পর্কে জানি:

সিদল শুঁটকি তরকারি : সিদল শুঁটকি (শুকনা মাছ) দিয়ে তৈরি এই বিশেষ তরকারি জামালপুরের অন্যতম বিখ্যাত খাবার। শুকনা মাছকে মশলা দিয়ে সেদ্ধ বা ভাজা করে রান্না করা হয়, যা ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

কাচকি মাছের ভর্তা : কাচকি মাছ জামালপুরে খুব সহজলভ্য। এটি ভেজে বা সিদ্ধ করে সরষের তেল, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে মেখে ভর্তা তৈরি করা হয়। এর স্বাদ অত্যন্ত মশলাদার এবং জনপ্রিয়।

পাটালি গুড়ের পিঠা : শীতকালে জামালপুরের গ্রামে গ্রামে পাটালি গুড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, এবং দুধ-পিঠা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভাজাপোড়া শাক : গ্রামের মানুষজন বিভিন্ন ধরনের শাককে তেলে ভেজে ভাজাপোড়া শাক তৈরি করেন। মুলা শাক, পালং শাক, কচু শাক ইত্যাদি দিয়ে এটি তৈরি হয়, যা ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

দই-চিড়া : দই-চিড়া জামালপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী নাস্তা। এটি সাধারণত সকালের খাবার হিসেবে খাওয়া হয়, যেখানে দইয়ের সাথে চিড়া মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। এটি সহজ, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।

বাঁশকোড়া তরকারি : বাঁশকোড়া বা বাঁশের কচি অংশ দিয়ে তৈরি এই তরকারি জামালপুরে একটি বিশেষ খাবার। এটি মাছ বা মাংসের সাথে মিশিয়ে মশলাদার তরকারি হিসেবে পরিবেশন করা হয়।

মালঞ্চ ভাজি : মালঞ্চ বা পানিফল জামালপুরের একটি বিশেষ শাক, যা সেদ্ধ বা ভাজা করে খাওয়া হয়। এটি স্বাদে একটু টক-মিষ্টি এবং খুবই পুষ্টিকর।

লেবু ভর্তা : জামালপুরে বিভিন্ন ধরনের লেবু পাওয়া যায়, যা দিয়ে ভর্তা তৈরি করা হয়। তাজা লেবুর রসের সাথে লবণ, কাঁচা মরিচ ও সরষের তেল মিশিয়ে এই ভর্তা তৈরি করা হয়।

চাপা শুঁটকি : চাপা শুঁটকি জামালপুরের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। এটি মশলা দিয়ে মেখে ভর্তা বা তরকারি তৈরি করা হয় এবং এটি ভাতের সাথে খেতে খুবই মজাদার।

মুলি শাকের চচ্চড়ি : মুলা এবং এর শাক দিয়ে তৈরি করা চচ্চড়ি জামালপুরের এক অন্যতম প্রিয় খাবার। এটি শীতকালে বেশি তৈরি করা হয় এবং ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

খেজুরের রসের পিঠা : শীতকালে জামালপুরে খেজুরের রস সংগ্রহ করে পিঠা তৈরি করা হয়। খেজুরের রসের স্বাদে মিষ্টি পিঠাগুলি বিশেষভাবে মজাদার এবং উৎসবকেন্দ্রিক।

সরষে তেলে মুরগির ঝোল : সরষে তেল দিয়ে রান্না করা মুরগির ঝোল জামালপুরের বিশেষ খাবারের একটি। এটি মশলাদার হয় এবং ভাতের সাথে অত্যন্ত সুস্বাদু লাগে।

ডুমুরের তরকারি : ডুমুর একটি পুষ্টিকর শাকসবজি, যা দিয়ে মশলাদার তরকারি তৈরি করা হয়। এটি ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয় এবং এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ দুইই বেশ চমৎকার।

পেঁপে ভর্তা : কাঁচা পেঁপে সিদ্ধ করে মশলা দিয়ে মেখে ভর্তা তৈরি করা হয়, যা জামালপুরে খুব জনপ্রিয়। এটি সাস্থকর এবং ভাতের সাথে খেতে সুস্বাদু।

সরিষা পাটালি আচার : জামালপুরের একটি বিশেষ ধরনের আচার হল সরিষা পাটালি আচার। এটি টক ও মিষ্টি স্বাদের, যা ভাতের সাথে কিংবা নানান ভর্তার সাথে খাওয়া হয়।

কুল/বড়ই আচার : কুল বা বড়ই ফল দিয়ে টক-মিষ্টি আচার জামালপুরের একটি বিশেষ খাবার। এটি দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ করা যায় এবং স্ন্যাকস বা খাবারের সাথে খাওয়া হয়।

ডাল চচ্চড়ি : ডাল দিয়ে তৈরি চচ্চড়ি জামালপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এতে পেঁয়াজ, রসুন, এবং অন্যান্য সবজি মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি রুটি বা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।

তেল পিঠা : তেল পিঠা জামালপুরের একটি মজাদার পিঠা। ময়দার আস্তরণে গুড় বা চিনি দিয়ে মিষ্টি পুর বানিয়ে তেলে ভেজে তেল পিঠা তৈরি করা হয়।

গোলাপজাম : গোলাপজাম জামালপুরের একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এটি ছানার মন্ড দিয়ে তৈরি মিষ্টি বল, যা চিনির সিরায় ভিজিয়ে পরিবেশন করা হয়।

তেঁতুলের টক : তেঁতুল দিয়ে তৈরি টক জামালপুরের আরেকটি মুখরোচক খাবার। এতে তেঁতুল, লবণ, কাঁচা মরিচ ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয়, যা মুখরোচক স্ন্যাকস হিসেবে জনপ্রিয়। জামালপুরের এইসব মজাদার খাবারগুলো শুধু স্থানীয় মানুষের পছন্দ নয়, বরং এখানকার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্বাদকে ধারন করে।


ভালো লাগলে শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন! ধন্যবাদ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট কুকি ব্যবহার করে থাকে। Check Now
Ok, Go it!