সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল :
জামালপুরে প্রভাবশালী আদম ব্যাপারীচক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক ভাগ্যবিড়ম্বিত বেকার যুবক।
বলা বাহুল্য, শুধুমাত্র অসচ্ছল গরীব অসহায় পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য শেষ সম্বলটুকুও হারাতে হচ্ছে বিদেশ নামক সোনার হরিণ ধরতে। কারও কারও ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও নিঃস্ব হচ্ছেন অধিকাংশই। জামালপুরে এই চক্রের দাপট ও দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। অভিযোগ আছে এর মধ্যে একটি প্রভাবশালী আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন অধিকাংশ বিদেশগামীরা। সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন কেউ কেউ। নিঃস্ব হয়ে পরিবারের সদস্যরা ভাসছে অথৈ সাগরে। সম্প্রতি এসব আদম বেপারীচক্রের কবলে পতিত প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবারের দু:খ দুর্দশার কথা জানতে এবং তাদের সাথে কথা বলতে সরেজমিনে জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে জেলা শহরে অবস্থিত দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির শাখা এবং তাদের কমিশনভিত্তিক আদম ব্যাপারী বা দালালের সন্ধান পাওয়া গেছে। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আঙুল ফুলে কলাগাছ এসব আদম ব্যাপারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরতে আমাদের অনুসন্ধানী টিম মাঠে কাজ করছে যাদের সংগৃহীত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আমাদের এ ধারাবাহিক আয়োজন। চলমান এ প্রতিবেদনে চোখ রাখুন। নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকে সচেতন করুন। যতদূর জানা যায়, এ চক্রের সদস্যরা প্রথমে নামিদামি কোম্পানী, আকর্ষণীয় বেতন ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে জামালপুর ও শেরপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ-সরল কর্মহীন যুবকদের ফাঁদে ফেলে। আর এভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের মূল টার্গেট। টার্গেটকৃত ব্যাক্তিরা তাদের ফাঁদে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ পাড়ি জমায়। আর সেখানেই পৌঁছানোর পর থেকেই দালালদের আসল রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
তারা সেখানে নিয়ে এসকল যুবকদের অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে সেই দালালদের চাহিদা অনুযায়ী যারা টাকা দিতে পারে কেবল মাত্র তারাই চাকুরী পায়। আর যারা টাকা দিতে না পারে তারা অর্ধাহারে অনাহারে অসহনীয় মানবেতর জীবন-যাপন করে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
আবার কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে প্রবাসে কারাজীবন বরণ করে নিচ্ছে। দেশে এসে আদম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ফেরত চেয়ে উল্টো তাদের হামলা-মামলার স্বীকার হতে হচ্ছে। অর্থ উপার্জনের আশায় পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরছেন অনেকেই।
বিদেশে গিয়ে পরিবারের অসচ্ছলতা গোছাবে এই আশায় বুক বেঁধে ভিনদেশে পাড়ি দিতে আগ্রহী জামালপুরের বেশ কয়েকজন যুবকদের করুণ পরিণতির তিক্ত অভিজ্ঞতার কাহিনি নিয়ে শুরু হলো আমাদের এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। যুবকদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নকে কাজে লাগিয়ে আদম ব্যবসায়ী চক্র ওই সকল যুকদের উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সৌদি আরব পাঠান হোটেল ভিসাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ভিসা বলে। সেখানে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করার পর তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটে। উল্টো তাদের খাওন-খরচের জন্য দেশ থেকে পাঠাতে বাধ্য হয় পরিবারের লোকজন। (চলবে)
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন