মন্তব্য কলাম : উন্নয়ন তো করতেই হবে তবে পরিবেশ রক্ষা করে

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
0

মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল 

উন্নয়ন একটি সমাজ বা দেশের অগ্রগতির মূল ভিত্তি, তবে উন্নয়নের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতাও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। সমন্বয়হীনতা বা অব্যবস্থাপনা যদি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে প্রবেশ করে, তাহলে তা বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তারই একটি উদাহরণ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে পটুয়াখালীর সমুদ্র সৈকতের বেড়িবাঁধে একটি পাকা সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় সংরক্ষিত বনের অংশ থেকে বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। গঙ্গামতি ও মম্বিপাড়া এলাকার সংরক্ষিত বনভূমি উজাড় করে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। শত শত গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। বনভূমি উজাড়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন কেবলমাত্র পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে না, এটি দীর্ঘমেয়াদে উপকূলীয় এলাকার বিপর্যয় ডেকে আনছে। এই বনভূমি ঝড়, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। বনের গাছগুলো উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে, যা দুর্যোগের সময় গ্রামগুলোকে সুরক্ষা দেয়।

স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহৃত সংস্থার উদাসীনতা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করেছে। বন কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞা দিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তা মানছে না। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর প্রতিকার পাওয়া হয়নি। এমনকি বন বিভাগ, ভূমি প্রশাসন এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন যে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের দাবির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার হুমকি দিয়েছে। এ উদাহরণটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, উন্নয়ন প্রকল্পের সময় সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে কিভাবে পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতি হতে পারে। সরকারের দায়িত্ব শুধুমাত্র উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করাই নয়, বরং প্রকল্পগুলো যাতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব না ফেলে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা। বন উজাড়ের মতো ঘটনা যদি দমন না করা হয়, তাহলে আগামী দিনের জন্য বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।

সরকারের প্রতিটি সংস্থাকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পে যারা পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রমে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরও জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা প্রয়োজন। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত প্রকল্প অপরিহার্য, তবে তা অবশ্যই পরিবেশ রক্ষার শর্তে হতে হবে। শুধুমাত্র উন্নয়নের নামেই পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করা উচিত নয়।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)