\ সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল \ |
প্রকৃতি আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি; কিন্তু বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে মানবসভ্যতা আজ এক নতুন দিগন্তের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। এই নতুন প্রযুক্তির কথা চিন্তা করতে গিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি উদাসীনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবনকে সহজতর করেছে ঠিকই কিন্তু এর ফলে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলছি। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দিন দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শহরাঞ্চলে কংক্রিটের জঙ্গল দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের চারপাশে এখন শুধু উচ্চতর ভবন, রাস্তাঘাট ও যানবাহনের শব্দ। যেখানে গাছপালা কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের গভীর আত্মিক সম্পর্কটির কথা আজ আমরা ভুলেইবযেতে বসেছি। একজন সুস্থ্য মানব শিশুর জন্ম, বৃদ্ধি এবং বিকাশ সবই প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে থেকেই হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ স্নেহ দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে, শাসন দিয়ে, তোষণ দিয়ে, বোধ দিয়ে তার অভ্যন্তরস্থ মানুষটিকে গড়ে তোলে। এজন্য সুস্থ, সুন্দর ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের দ্বিতীয় জননী। সুস্থ দেহ ও মনের অধিকারী মা যেমন সুস্থ ও সুন্দর শিশুর জন্ম দেন তেমনই সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশও সুস্থ ও সুন্দর মানুষ গড়ে তোলে।
মানুষ এখন শুধু প্রকৃতি থেকেই বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না বরং প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দিও হয়ে পড়ছে। যার ফলে মানুষের মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও বনভূমি ধ্বংস, অধিক জনসংখ্যা, বিভিন্ন ধরনের দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির ওপর বেশ ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। যার ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে। এমনকি প্রকৃতি থেকে দূরে থাকার কারণে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কেরও অবনতি হচ্ছে।
বর্তমান যুগ হলো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই প্রযুক্তির বিকাশ মানুষের জীবনে অঙ্গীভূত হয়েছে। একদিকে যেমন স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভিডিও গেমের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে ঠিক তেমনি অপরদিকে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকৃতি আমাদের শারীরিক জীবনেও বেশ ভূমিকা পালন করে। গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর অন্যদিকে প্রকৃতির অভাবে উদ্বেগ, বিষন্নতা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। এই প্রকৃতির অভাব মানুষের মানসিক শান্তি এবং সুস্থতাকে হারাতে বাধ্য করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো একধরনের থেরাপির মতো কাজ করে যা মানুষকে স্বস্তি দেয়। প্রকৃতি শূন্যতার ফলে মানুষের জীবনের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানবিক সম্পর্কের উন্নতি, সৃজনশীলতা ও সুখের অনুভূতিগুলো হ্রাস পাচ্ছে। প্রকৃতির অভাব মানুষকে জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলো উপভোগ করতে বাধা দিচ্ছে। শিশুকাল থেকেই শেখানো হয় ‘গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও’ কিন্তু বর্তমানে এই কথাটি বাস্তবে আর কয়জনই বা রূপ দেয়। তাই নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের পুনঃসংযোগ স্থাপন করতে হবে।
লেখক; বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব ও সভাপতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনী সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, জামালপুর জেলা শাখা।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন