\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \ |
অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় জামালপুর শহরে দিনের পর দিন শব্দ দূষণ বেড়েই চলেছে। বলা বাহুল্য, শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে জামালপুর শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস আছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ, মাইকের ব্যবহার, বিদ্যুত উৎপাদন প্লান্ট, শিল্প কারখানা কোনো ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম আছে তা মানা হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে, শব্দদূষণ একটি দণ্ডণীয় অপরাধ। প্রথমবার অপরাধের জন্য অনধিক এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। আর পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। শব্দদূষণ মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়। শব্দ স্তরের গ্রহণযোগ্য পরিমাণ প্রায় ৬০-৬৫ ডেসিবেল, যা একটি সাধারণ কথোপকথনের সমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দের মাত্রা কারও কারও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। শব্দ দূষণের বিভিন্ন উৎসসমূহ-শিল্প উৎসের মধ্যে আছে ইলেক্ট্রিসিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান্ট, প্রিন্টিং প্রেস ও ধাতু শিল্প। বেশিরভাগ শিল্পে ভারি মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা খুব উচ্চ মাত্রার শব্দ তৈরি করে। এক্ষেত্রে কম্প্রেসার, এক্সজস্ট ফ্যান, গ্রাইন্ডিং মিল ও জেনারেটরের মতো সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়। যা পরিবেশে সামগ্রিক শব্দের মাত্রা বাড়ায়। এই পরিবেশে যারা কাজ করে তারা যদি শব্দের প্রভাব কমাতে ইয়ারপ্লাগ পরার মতো যথাযথ ব্যবস্থা না নেন, তাহলে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন। অটোমোবাইল বিপ্লব শহুরে অঞ্চলে পরিবেশ বা শব্দ দূষণের একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাস, ট্রেন ও ট্রাকের মতো যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজটের কারণে বেশি মাত্রায় হর্ণের ব্যবহার হয়, ফলে অসহনীয় শব্দ ছোট-বড় সবারই কানের ক্ষতি করছে ও মস্তিষ্কে খারাপ প্রভাব ফেলছে। এছাড়া জনসভা, ধর্মঘট, নির্বাচন, ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ ইভেন্টগুলোর মতো পাবলিক ফাংশনগুলোতে অনেক জোরে মাইকিং বা স্পিকার চালানো হয়। ফলে শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। ভারী ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে কিছু খামারে ৯০-৯৮ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই সরঞ্জামগুলোর মধ্যে আছে র্থ্যাশার, নলকূপ, ট্রাক্টর, ড্রিলার, চালিত টিলার ও হারভেস্টার।এমনকি নির্মাণ কাজ, ওয়ার্কশপ ও অটোমোবাইল মেরামত শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। এ ধরনের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো প্রচুর শব্দ উৎপন্ন করে, যা শ্রবণ ক্ষমতার ক্ষতি করে। গৃহস্থালীর কার্যক্রমেও কিন্তু শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। যেমন- দরজা জোরে ধাক্কা দেওয়া, বাচ্চাদের খেলার আওয়াজ, আসবাবপত্র নড়াচড়া, বাচ্চাদের কান্না, উচ্চস্বরে তর্ক করার ইত্যাদি। এছাড়া প্রেসার কুকার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন, সেলাই মেশিন, মিক্স-গ্রাইন্ডার, ডেজার্ট কুলার, এক্সস্ট ফ্যান ও এয়ার-কন্ডিশনারগুলির মতো গৃহস্থালির সরঞ্জামগুলো সমানভাবে প্রচুর শব্দ তৈরি করে। এমনকি অফিস সরঞ্জাম যেমন- প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার ও টাইপরাইটার শব্দ দূষণে অবদান রাখে। তাই আমরা চাই জামালপুর শহরে শব্দ দূষণ রোধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হোক। কোন ক্রমেই যেন এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত না হয়। আমরা আশা করবো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন