সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল:
বছর ঘুরে আবারও আসন্ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জামালপুর জেলার পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ, চলছে রঙের কাজ।
আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
পাঁচ দিন চলবে দুর্গোৎসব। যা আগামী ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এ উপলক্ষে জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় সর্বমোট ১শ ৮৮টি মন্ডপে পূজার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষে থেকেও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মন্দির কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে প্রশাসন।
এদিকে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। একনিষ্ঠ চিত্তে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। শহর এবং গ্রামীণ জনপদের দুর্গাপূজা মন্ডপ ও মন্দিরগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ আবার কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন।
দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষী, গণেশ, কার্তিকসহ নানা ধরনের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কারিগরেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমাশিল্পী স্বাক্ষর তালুকদার বলেন, আমরা জামালপুরের শ্রী শ্রী ‘রী দয়াময়ী মন্দিরের প্রতিমাগুলো নতুন করে রং ও তুলির আঁচড় দিয়ে সাজিয়ে তুলছি।
আগে ৮০/৯০ হাজার টাকায় পুরো প্রতিমা তৈরি করা থেকে সাজানো পর্যন্ত খরচ হত। এখন মালামালের দাম বৃদ্ধি ,শিল্পিদের পারিশ্রমিক বাড়ার কারণে খরচ প্রায় দিগুনেরও বেশি, তবুও এই কাজ আমাদের করতেই হবে কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি। তিনি আরো বলেন শেষ মূহূর্তে দেবিকে পড়ানো হবে পোষাক পরিচ্ছদসহ অন্যান্য অলংকার।
মন্দিরের সেবাইত নিরঞ্জন ভাদুড়ী বলেন, পঞ্জিকামতে আগামি ৯ই অক্টোবর শুরু হবে শারদীয় দূর্গাপূজা। এ দিন হবে ষষ্ঠি পূজা। আর ১২ই অক্টোবর শনিবার দশমিতে চোখের জলে দেবি বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজা।
শ্রী শ্রী ‘রী দয়াময়ী মন্দির, জামালপুর মন্দির কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার সোম রানু বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব এই দুর্গা পুজা। প্রতিমা গড়া শেষ, চলছে রঙ্গের কাজ ও শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
এখন শুধুমাত্র বাকি আনুষ্ঠানিকতা। আশা করি এবারের পূজা আনন্দঘন ও নিরাপদে উৎযাপন করতে পারব। পূজায় সরকারি সহায়তা আগের চেয়ে একটু বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান এবং সবাইকে এ উৎসবে সামিল হওয়ার আহব্বান জানান।
শারদীয় দূর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে জামালপুরে পুলিশ বাহিনীর নিরাপত্তার ভূমিকা সম্পর্কে জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (বিপিএম -সেবা) বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পূজা মণ্ডপ ঘিরে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় জানান,
জামালপুর জেলায় মোট ১শ ৮৮টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় ৪৬টি, বকশীগঞ্জ উপজেলায় ১২টি, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ২৩টি, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২৭টি, ইসলামপুর উপজেলায় ১৫টি, সরিষাবাড়ি উপজেলায় ৪৪টি এবং মেলান্দহ উপজেলায় ২৪টি।
জামালপুর জেলার সাধারণ মানুষ সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। জামালপুরবাসী জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ধর্মীয় সম্প্রীতি বোধ সম্পন্ন হওয়ায় আমরা নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গা উৎসব পালন করে আসছি।আমরা দুর্গোৎসবকে উৎসবমুখর করার জন্য ইতোমধ্যে জামালপুর জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং ডি.আই.জি মহোদয়ের সাথে সভা করেছি।
জামালপুর জেলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং পূজার প্রস্তুতি খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আগামী ৮ অক্টোবর মহাপঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে এবং ১৩ অক্টোবর শুভ বিজয়া দশমীতে মাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গা পূজার সমাপ্তি ঘটবে।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন