মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল |
জামালপুর শহর একসময় ছিল পুকুরের শহর। এই জামালপুর শহরে একসময় প্রায় দুইশ’ পুকুর ছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এখন আমাদের এই প্রিয় শহরটি প্রায় পুকুরশূণ্য হয়ে গেছে। অথচ এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ছিলনা আর এখনও নেই।
অথচ, পুকুর, খাল, নদী–এসব জলাশয় শহরের প্রাণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পুকুর ও জলাশয় না থাকলে শহরের তাপমাত্রা শুধু বৃদ্ধি পায় না, শহরে পানির স্তরও নিচে নেমে যায়। কিন্তু সেই পুকুর ও জলাশয়গুলোকে কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান জরুরি। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলাশয় সংরক্ষণ আইনসহ অনেকগুলো আইন কোনো না কোনোভাবে জলাশয় দূষণ ও দখল প্রতিরোধ, সংরক্ষণ ও রক্ষা বা এ সম্পর্কিত বিষয় উল্লেখ করেছে। কিন্তু এসব আইন বাস্তবায়নও কোনো একক সংস্থার কাছে না থাকায় আইনের বাস্তবায়ন শিথিলভাবে হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন বাস্তবায়নই হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া দখল ও দূষণকারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শ আইন বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হয়।
যারা পুকুর, দিঘি ও জলাশয়গুলো ভরাট কিংবা দখল করেছেন ও করছেন, তাদের বেশিরভাগই আসলে লোভ ও লালসা থেকেই করছেন। ফলে পুকুর ভরাটের ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে বেআইনিভাবে এবং কখনো কখনো প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আইনের ফাঁক গলিয়ে। এসব ক্ষেত্রে আইন রক্ষার দায়িত্ব যে সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর সে সকল প্রতিষ্ঠানকেও আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে দেখছি না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রকৃতি প্রদত্ত কিংবা মানুষের সৃষ্টি করা বৈশিষ্ট্যসম্বলিত ও পুরনো পুকুর, দিঘি এবং জলাশয়গুলোকেই বেশি নষ্ট করা হচ্ছে, ভরাট ও দখল করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। যা রক্ষার ক্ষেত্রে এখনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জরুরি। উন্নয়ন মানে পরিবেশ ধ্বংস নয়, এ ভাবনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু তাৎক্ষণিকভাবে লাভবান হবার জন্যই এসব পুকুর জলাশয় ভরাট করে দখল ও ভবন নির্মাণ চলছে। এ প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় সাধন করতে হবে। বিশেষ করে এর জন্য, জামালপুর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, ভূমি প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরকে সমন্বয়ের মাধ্যমে পুকুর, দিঘি ও জলাশয় রক্ষার জন্য কাজ শুরু করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন