আমার দেখা '২৪ এর আন্দোলনে জামালপুর জেলার চিত্র

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
0

 মাসুম মিয়া 

বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সব স্থানে সবথেকে বেশি আলোচনায় এখন সমন্বয় শব্দটি। জামালপুর জেলাও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়। এই সমন্বয় শব্দের রেশ ধরে ইতোমধ্যে জামালপুরে ঘটে গেছে নানা তর্ক, বিতর্ক, নানা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা ৷ তবে জামালপুর জেলার বৈষম্যবিরোধী ২৪ এর সফল আন্দোনের আসল ইতিহাস জামালপুরবাসীর অজানা ৷ আজ আমি বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মনে করছি জামালপুরবাসীর সত্যটা জানা খুব প্রয়োজন ৷ সময়টা- ৭ই জুলাই ২০২৪ ইং রবিবার ৷ গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক জনাব জাকির হোসাইন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সভাপতি সানাউল্লাহকে ফোন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সারাদেশের ন্যায় জামালপুরেও কোটার সংস্কার নিয়ে প্রোগ্রাম করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন । পরবর্তীতে সেই নির্দেশনা মোতাবেক জামালপুরের প্রাণকেন্দ্রের বৃহৎ বিদ্যাপিঠ সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ৮ই জুলাই ২০২৪ইং সোমবার তারিখে ছাত্রঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি- সানাউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক-সাদ আহম্মেদ রাজু ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সাবেক সভাপতি মীর ইসহাক হাসান ইখলাস ভাই, ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার অন্তর্গত সরিষাবাড়ি উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক- মাহমুদুল হাসান বিবেক, ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক - রাজন আহম্মেদ, লিটন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল হাসানের সহযোগিতায় উক্ত মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সফলভাবে মানববন্ধনটি সম্পন্ন হয়। বলে রাখা ভালো এদের মধ্যে বিবেক আশেক মাহমুদ কলেজের রানিং স্টুডেন্ট হওয়ায় পোগ্রামে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম । যা জামালপুর শহরে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করে।

সেইদিন ৮ই জুলাই সোমবার মানববন্ধন শেষে সন্ধ্যার পর পরই ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সভাপতি, সানাউল্লাহসহ শাকিল, বিবেকসহ অন্যরা জামালপুরের প্রাণকেন্দ্র গেইটপারস্থ আমার অফিসে আসেন এবং মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরে পরবর্তী পোগ্রামে একটা হ্যান্ড মাইকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন । আমি তাদেরকে গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সাথে তথা জনাব জাকির হোসাইন ভাইয়ের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেই । এবং আমি ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ও গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসাবে তাদের আসস্ত করি যে, গণঅধিকার পরিষদ দ্রুতই হ্যান্ড মাইকের ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত ভাবে যতটুকু সহযোগীতা করবো সেটা বোনাস বলেও তাদের মনোবল বৃদ্ধি ও সাহস দেবার চেষ্টা করি৷ ফলসরুপ পরবর্তী দিন ৯ই জুলাই ২০২৩ ইং মঙ্গলবার গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে গণঅধিকার পরিষদ এর সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব আরিফ হোসেন ভাই একটি হেন্ডমাইক কেনার অর্থ ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখাকে প্রদান করেন। সকল ফান্ডিং গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা থেকেই চলমান থাকে। পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি সানাউল্লাহকে পরবর্তী পোগ্রামগুলি ঢাকার সাথে তাল মিলিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলোনের ব্যানারে করার পরামর্শ দেন । তারপর আবারো সানাউল্লাহ, রাজু, বিবেক, ইখলাস ভাই প্রমুখ এদের নেতৃত্বে ১১ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে জামালপুরের প্রাণকেন্দ্র ৫ রাস্তায় "সকল গ্রেডের সরকারি চাকুরি এবং সকল ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষায় বৈষম্যমূলক কোটার যৌক্তিক সংস্কারের ১ দফা দাবিতে” বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়৷ যে প্রোগ্রামটিতেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পরে ১৪ জুলাই ২০২৪ ইং রবিবার ডিসি অফিসে এই মর্মে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।

শুরু থেকেই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ অব্যহত থাকে। এদিকে ঘটে এই আন্দোলনের সবথেকে মুমূর্ষ ও মর্মান্তিক ঘটনা আবু সাঈদ হত্যাকান্ড । যেখানে বাংলার বীর সৈনিক আবু সাইদ রংপুরে নিজের বুক পেতে দিয়েছিল সশস্ত্র স্বৈরাচারী পুলিশ বাহিনীর সামনে আর নিরস্ত্র আবু সাঈদের উপর নির্বিচারে নির্মমভাবে গুলি চালায় স্বৈরাচারের দোসর সেই পুলিশ বাহিনী ৷ সেইদিন ১৬ই জুলাই ২০২৪ ইং মঙ্গলবার সেই ঘটনায় সারা বাংলাদেশ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। একজন সাবেক ছাত্রনেতা হিসাবে আমার রক্তেও যেন আগুন জ্বলে উঠে । খুব হিংসা হচ্ছিল আবু সাঈদের প্রতি তার জায়গায় কেন আমি হলাম না! আমি আমার অফিসে বসে যেন হাসফাস করছিলাম ৷ না এভাবে চলতে পারে না। আমি ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার নেতাদের নিয়ে ১৬ই জুলাই মঙ্গলবার বিকাল ৫ ঘটিকায় গেইটপারস্থ আমার অফিসে একটি ইমার্জেন্সি মিটিং কল করি। আমার ইমারজেন্সি মিটিং কল করা দেখে আমার দল গণ অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সিনিয়র নেতা ও ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারুক আহমেদ হৃদয় ভাই আমাকে ফোন করে পরামর্শ দেন এবং বলেন, আমি যাতে আন্দোলনে স্বশরীরে সম্পৃক্ত না হই। কেননা একটা দলীয় হাইলাইট সক্রিয় ব্যক্তি এ আন্দোলনের নেতৃত্বে আসলে হিতে বিপরীত হতে পারে । অবশেষে আমি তাদের পরামর্শ মানতে বাধ্য হলাম। তারপর যথাসময়ে সানাউল্লাহ, শাকিল, বিবেক, রাজন প্রমুখরা আমার অফিসে উপস্থিত হয়। এবং তারা সবাই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এর কথা ব্যক্ত করতে থাকেন এবং তারা জামালপুরের অবস্থা সম্পর্কে আমাকে অবগত করে বলেন, "ভাই আগামীকাল জেলা স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক নাম) বর্তমান- জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ (সাবেক নাম) বর্তমান-জামালপুর মেডিকেল কলেজসহ ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন প্রমুখ আরো কিছু সংগঠন তারাও সাধারণ ছাত্র হিসাবে আমাদের সাথে রাজপথে থাকবে । এদিকে ছাত্র লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ওতপেতে বসে আছে। কাল যে কি হবে আল্লাহ জানে! ভাই কাল প্রোগ্রামে আপনার নেতৃত্ব প্রয়োজন আপনার থাকতেই হবে ৷

আমি সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার আস্থাভাজন এবং গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার রানিং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসাবে আমার দলের নির্দেশনা সম্পর্কে তাদের অবগত করি৷ তবে তাদের সবদিক থেকে সহযোগিতার জন্য সাহসীকতা দিলে তারা আমার কাছে পোগ্রাম কিভাবে বাস্তবায়ন করবে সে সম্পর্কে রোড ম্যাপ করে দিতে বলেন, যেন আওয়ামী লীগ পোগ্রামকে নষ্ট না করে দিতে পারে । আমার অফিসে লোডশেডিং এর কারনে আমি নেতাকর্মী নিয়ে অফিসের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মিটিং পরিচালনা করে নির্দেশনা ও পরিকল্পনা করে দেই যেন তারা আন্দোলন বাস্তবায়নে সফল হয়। আমি তাদের বলি তারা আন্দোলনের কমিনিউকেশনের জন্য যে মেসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করেছে সেখানে যেন দ্রুত সকল গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা ও সংশূষ্ট সকলকে সেখানে এড করেন এবং পোগ্রাম শুরুর জন্য জামালপুরের বৃহৎ চত্তর আজম চত্বর(পূর্বের নাম) বর্তমানে বিজয় চত্বর কে নির্বাচন করেন৷ এবং আগামীকাল ১৭ই জুলাই বুধবার সকালে বিচ্ছিন্ন ভাবে সকলে চক্তরের ধারে দোকান গুলিতে অবস্থান করেন এবং সর্বক্ষনিক মেসেঞ্জার গ্রুপে নজর রাখে ৷ অধিকাংশের উপস্থিতি অনুমান করে একজন লাউডলি স্লোগান দিয়ে রাস্তার ভেতর নামবে। সেই সিগনালেই বাকি সবাই একযোগে রাস্তায় নেমে রাস্তা ব্লক করে কর্মসূচী শুরু করবে ৷ এতে করে অনেকাংশে রিস্ক কমানো সম্ভব ৷ এবং যত দ্রুত সম্ভব পোগ্রাম শুরু হবার পর সেই চলমান প্রোগামের ছবি ভিডিও, লাইভ সোসাল মিডিয়ার প্রচার করতে হবে যেন আশেপাশের সকলে নির্ভয়ে চলে আসতে পারে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ৷ এখন তাদের উচিত আজ রাতে মধ্যে জেলা স্কুলের ছাত্রদের সাথে ও অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সাথে সমন্বয় নিশ্চিত করা। তারা আমাকে আশ্বস্ত  করেন যে তারা সবটা নির্ভুল ভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে৷ সেদিন ছাত্রঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার নেতৃবৃন্দের সাথে আরো নানা বিষয়ে কথা হয়। তার পর তারা চলে যায় বাকী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সাথে সমন্বয়ের কাজ করতে ৷ রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে আমার ফোনে ছাত্র অধিকার পরিষদ, জামালপুর জেলার এর সাংগঠনিক ফারুক আহমেদ এর ফোন আসে এবং আমাকে জামালপুর ওভার পাসের উপর মহিলা কলেজের সাইটটায় আসার জন্য আহবান জানায় । আমি আশপাশেই ছিলাম, রিক্সা করে সেখানে চলে যাই । গিয়ে দেখি ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার

সাবেক সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসহাক হাসান ইখলাস ভাই, আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার নেতাকর্মী, সাথে সিরিরের কিছু নেতা কর্মী, ছাত্রদলের কয়েকজন সহ ১০- ১৫ জন বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন আলোচনা করছিল পরের দিনের আন্দোলন সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য । আন্দোলনের স্থান হিসাবে

প্রত্যেকের পছন্দ ছিল বর্তমান বিজয় চত্তর (সাবেক আজম চত্তর) ৷ পাশাপাশি মীর ইসহাক হাসান ইখলাস ভাই একজন সিনিয়র পারসোন ও সাবেক ছাত্রনেতা হিসাবে তার অভিজ্ঞতার প্রেক্ষীতে বর্তমান জামালপুর মেডিকেল কলেজ(সাবেক শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ), জিলা স্কুল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুশ্লেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমার কাছে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন ৷ এদিকে আলোচনার মধ্যে সবাই সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পোগ্রামের চিন্তা বা মত দিলেও শিবিরের নেতা কর্মীদের মতামত ছিল এটাকিং মোড বা হামলা হলে প্রতিরোধ ও প্রতিআঘাতের প্রস্তুতি রাখার বিষয়ে । তো শহরে পুলিশ র ্যাবের টহল তখনো চলমান। তাই সবাই স্থান ত্যাগ করতে চাইছিল ৷ তখন আমি আমার ব্যস্ততার জন্য বাসায় চলে আসি ৷ সেদিন আর তার পরের কোন কিছু সম্পর্কে আমি অবগত নই।

পরের দিন ১৭ জুলাই বুধবার যথাযথভাবে বিজয় চত্বরে সানাউল্লাহ, রাজু, ফারুক, রাজন, বিবেক,লিটন এদের নিয়ে সিনিয়র পার্সন ও ছাত্রধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সাবেক সফল সভাপতি ইখলাস ভাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় যেখানে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাকিব নামের ছাত্রদলের নেতার নেতৃত্বেও অনেকে সেখানে অংশ নেয়। এবং সেইদিন সেখানে ছাত্রদল জামালপুরের অনেক নেতাকর্মী বিচ্ছিন্নভাবে অংশগ্রহন করেন যা অনেক ভিডিও ফুটেজের প্রমানেও পাওয়া যায়। সেখানে ছাত্র শিবির, ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরাও সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থানই ছিল সবথেকে চোখেপড়ার মতো ৷ আন্দোলন শুরু হলে তার ঘন্টাখানেক পরে জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের একটা মিছিল নিয়ে আন্দোলনের স্পটে অংশ নেয়। পাশাপাশি রবিন ও নূর নামে দুজন শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়েও অংশগ্রহন করেন। সেদিন বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলতে থাকে। যেহেতু প্রচুর রোদ এবং উত্তপ্ত আবহাওয়া, এবং সকলের নিরাপত্তা ও আগামীদিনগুলির কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ সব বিবেচনায় ইখলাস ভাই আন্দোলনের প্রধান সিনিয়র হিসাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের সাথে আলোচনা করে দুপুর ১২:৩০ এর দিকে বক্তব্য দেন এবং সেদিনের কর্মসূচীর সমাপ্ত ঘোষনা করেন।

কিন্তু বিপুল ছাত্র জনতা এই রায় না মেনে তারা এই বিপুল সংখ্যাক ছাত্রদের নিয়ে বিজয় চত্তর থেকে ৫ রাস্তার দিকে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের দিকে যাত্রা শুরু করেন। যার নেতৃত্ব পুরোপুরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট চলে যায়। এদিকে যাত্রা পথে, শেখেরভিটা রেলগেটে এসে তারা রেল পথ অবরোধ করে এবং সেদিনের জামালপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ অভিমোখী কমিউটার ট্রেনটিকে তারা সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখে যার পেছনে জামালপুর জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভূমিকায় ছিল মূখ্য ৷ কেননা ট্রেনের চালক কৌশলে ট্রেনটি ছাত্রদের থেকে পার করে নিতে হালকা স্পীডে চলতে শুরু করলে তারা ট্রেনের ইঞ্জিন লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। ট্রেনকে থামিয়ে দেয় ও সকলে মিলে ঘন্টাখানেক সেখানে অবস্থা করেন। পরবর্তীতে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে আশেক মাহমুদ দিকে অগ্রসর হয়৷ বলে রাখা ভালো এদিকে আশেক মাহমুদ কলেজে ছাত্রলীগ জামালপুরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে ছিল । ছাত্ররা মিছিল নিয়ে কলেজের সিমানায় ডুকতে গেলেই তারা শিক্ষার্থীদের উপর রড, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালাতে আসে কিন্তু বিপুল ছাত্র জনতার মুখে পড়ে তারা উল্টো দৌড়ানি খেয়ে পুলিশের সহযোগীতায় কলেজের প্রসাশনিক ভবনে আশ্রয় নেয়। সেই ধাওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবে আন্দোলনে অংশ নেওয়া রোটারেক্ট ক্লাব জামালপুরের ট্রেজারার অন্তত পায়ে গুরতর আঘাত পায়। এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে, মাঠে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান নেয় ও ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শ্লোগান শুরু করে৷ পরবর্তীতে সেদিন ছাত্ররা আশেক মাহমুদ হয়ে গেইটপার মুখে মিছিল নিয়ে গেইটপার এসে অবস্থান নেয় এবং সেদিনের মতো কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে । আমি রাতে নিজে গিয়ে ও অনেকের সাথে ফোন করে খোজখবর নেই৷ ফোনে আহত সেই অন্ততরের খোঁজ নিতে গেলে সে বার বার বলে ভাই কোন পুলিশের ঝামেলা হবেনাতো? আমি কোনদিন এসব ঝামেলাই যাইনি ৷ এটাই প্রথম ভাই একটু দেখবেন যেন মামলা না হয় আমার নামে । আমি তাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বললাম ও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে বললাম। এদিকে সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ছাত্রনেতাদের সাথে সেদিন ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার নেতৃবৃন্দদের দারুন সক্ষতা গড়ে উঠে যা পরের দিন ১৮ তারিখের কর্মসূচি বাস্তবায়নেও দারুন ভুমিকা রাখে ৷ তবে একটা মজার বিষয় না উল্লেখ্য করলে এই পুরো লেখাটিই হয়তো ব্যর্থ হবে। আর তা হলো প্রতিটি দিনের কর্মসূচীর ভেতর কারো একক নেতৃত্ব লক্ষনীয় ছিলনা। পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনো কখনো একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর কমান্ড ও উপস্থিতি বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার কমান্ডে রুপ নিচ্ছিলো ৷ যা সেসময় বিশৃঙ্খলা মনে হলেও সেটাই যে আন্দোলনের সফলতার অন্যতম কারণ ছিল তা এখন বলতে আমার কোন সন্দেহ নেই৷ ১৮ তারিখে ঘটে যায় জামালপুরের ইতিহাসের স্বরণীয় ঘটনা ৷ ১৭ তারিখের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতাদের জোর পূর্বক ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে ট্রেন অবরোধ, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান সব মিলিয়ে পরের দিন কোথায় আন্দোলন শুরুকরবে এ নিয়ে যখন সবাই দিশেহারা ৷ ১৮ তারিখ সকালে ইখলাস ভাইকে হটাৎ আমার অফিসে দেখলাম । জানতে পারলাম আমার অফিসের পেছনেরদিকটাই কিছু ছাত্রনেতাকর্মী একত্রিত হচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই গেইপারে তারাই সর্বপ্রথম স্লোগানে মুখরিত করে রাস্তায় নামে। মূলত তাদের অধিকাংশ ছাত্রদলের কর্মী বলেই জানতে পেরেছি। আর দ্রুতসময়ের মধ্যে আশেপাশের সব স্থান থেকে সাধারণ ছাত্ররা সেখানে যোগ দেয়। সেদিন আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল মাহমুদুল হাসান বিবেকের কাছে। শুরু থেকেই স্লোগানে স্লোগানে পুরো উপস্থিত ছাত্র জনতাকে মুখরিত করে রাখছিল ৷ সেদিনও ছিল প্রখর রোদ । আমি আমার অফিসের ছোটরে”শুদ্ধ” কে দিয়ে ঠান্ডা পানি আনালাম। পরে নিজে গিয়ে কর্মসূচির ভেতরে  বিবেক সহ আন্দোলনে অবস্থানরত কিছু শিক্ষার্থীদের পানি পান করাই । কিছুক্ষণ পর দেখি কেবা করা যেন বালতি বালতি সরবত বানিয়ে সকলকে খাওয়াচ্ছিলো যা মনোমুগ্ধকর ছিল। সেদিন ছাত্র জনতার অবস্থা যেহেতু গেইটপার দুই রেল লাইনের মাঝামাঝি ওভারপাসের নিচে ছিল, যা আমার অফিসের সামনেই। তাই সর্বক্ষনিক তদারকি চলছিল ৷ সময় তখন আনুমানিক ১:৩০, আমি আমার অফিসের বাইরে দাড়িয়ে ৷ হটাৎ পোগ্রাম থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীরা দেখলাম সবাই বেরহয়ে চলে গেলো ৷ ইখলাস ভাই আমার কাছে এসে বললো, গতকালের আশেক মাহমুদের বিষয় নিয়ে একটা মামলা হয়েছে। আজ আমি, বিবেক এই পোগ্রাম থেকেই গ্রেফতার হতে পারি। বললাম তাহলে আজকের মতো কর্মসূচী শেষ করে দেন গিয়ে । ইখলাস ভাই বললো না সবাই মানবে না। তার পর ওনি বললেন সকালে মানিব্যাগ নিয়ে বের হননি, তাই বাসায় যাবো। আমি ওনাকে টাকা দিতে চাইলাম যে আপাতত নেন, পোগ্রাম রেখে চলে যাবেন! ওনি বললেন, না একটু দরকারও আছে আমি বাসা থেকে ঘুরেই আসি, যেহেতু কাছেই বাসা ৷ ইখলাস ভাই চলে গেলেন। আমি অফিস বন্ধ করে বাসায় খেতে যাবো। যাবার আগে বিবেক, সানাউল্লাহ ওদের সাথে দেখা করে যাবো ভেবেছিলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি তারাও নেই কিন্তু কর্মসূচি চলমান। এদিকে অনেকে দেখলাম ছাত্রদের মাঝে তখনো শরবত বিতরণ নিয়ে ব্যস্ত । আমি বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সায় উঠতে না উঠতেই হুট করেই ছাত্রজনতার সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ শুধু হয়। এদিকে রিক্সা চালক কৌশলে আমাকে সেখান থেকে বের করে সেইফলি বাসায় পৌঁছে দেন। আমি লাগাতার একে একে ফোন করে যাচ্ছি । সবাই ব্যস্ত, কিছুক্ষণ পর সানাউল্লাহ, ছাত্রঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সভাপতি ফোন করে জানানো বিবেককে পুলিশ আটক করেছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আমাদের আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। আমি সরাসরি তখনই ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদ এর সভাপতি নূরুল হক নূর ভাইকে মেসেজ করি, ভাই বিবেক গ্রেফতার হয়েছে। নুর ভাই সাথে সাথে আমাকে কল করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। আর সাথে এও বলেন কোনভাবেই যেন আন্দোলন জামালপুরে বন্ধ না হয়। সেদিনই ছিল নূর ভাইয়ের সাথে শেষ কথা ৷ তার একদিন পরই তিনিও গ্রেফতার হন। জামালপুরের পরিস্থিতি থমথমে, এক বড়ভাই ফোন করে বললেন আজ রাতে বাড়িতে থেকোনা ৷ আর ফোনটা বন্ধ করে রাখো। আমার ফোন অনই ছিল আমি অনেকের সাথে রাতে যোগাযোগ করি বিবেকের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরদিন শুক্রবার জানতে পারি বিবেকের বাবা থানায় এসেছে। আমি সকালেই৷ চলে যাই ওনার সাথে দেখা করতে। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিনই বিবেককে ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ ৷ তারপর আন্দোলনের পুরো বিষয়টি অনিয়ন্ত্রিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থী সাধারণ জনতার ক্ষোভের উপর ভর করে চলমান থেকেছে প্রতিদিন ৷ সেখানেও বিবেক ছাড়া আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার উপরোক্ত সকল নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল৷ এর মাঝে ছাত্রলীগের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষসহ জামালপুরে ঘটে যায় নানা ঘটনা ৷ যার বিবরণ সম্পর্কে আমি স্পষ্টভাবে কিছু জানিনা বিধায় এড়িয়ে যাচ্ছি । অন্যদিকে আওয়ামী লীগ  বাহিনীর রামদা, লাঠিসোটা, রড সহকারে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে শহরে ও জনমনে ত্রাস সৃষ্টি ছিল চোখে পড়ার মতো । এদিকে একদিন রাতে সম্ভবত ২-৩ তারিখে ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার ছাত্রনেতা আমাকে একটা অনলাইন মিটিং এর লিংক দেন। সেখানে ইখলাস ভাইসহ ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলার সিনিয়র ছাত্রনেতারা যুক্ত ছিলেন । তারা আমাকে সমন্বয় কমিটির রূপরেখা তৈরি করে দিতে বলেন । তাদের সকলের আলোচনা শুনে তাদের কাছে প্রশ্ন রাখি কে প্রধান সমন্বয়ক হতে আগ্রহী আছো বলো, সেখানে তখন কেউ আগ্রহ দেখায়নি। বরং সবাই সিনিয়র নেতা হিসাবে ইখলাস ভাইকেই চাচ্ছিল। তাই পরে ইখলাস ভাইকে প্রধান সমন্বয় করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক এক সমন্বয় কমিটির রুপরেখা তৈরি করা হয় জামালপুর জেলার জন্য ৷ পরবর্তীতে সেই কমিটিই জামালপুর জেলার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কর্তৃক বৈধতা দিয়ে তারা পাবলিক করলে বিষয়টি জনসম্মুখে আসে । তবে বলে রাখা ভালো কমিটি প্রস্তুতে সময় সকল সাধারণ ছাত্রনেতা, সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অবগত করা হলেও বেশিরভাগরাই কমিটিতে নাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় । পরে তাদের নাম বাদ দিয়েই কমিটি প্রস্তুত করতে ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখা বাধ্য হয়। তারপর সেই কমিটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদে পাঠানো হলে তারা সেটা পাবলিক করেন। কমিটি পাবলিক হলে আন্দোলনকারীরা সবাই তা মেনে নিয়ে যার যার জায়গা থেকে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছিল ৷ যার ফল স্বরূপ ৫ই আগস্ট জামালপুর জেলা তথা পুরো বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার মুক্ত হয়।


লেখক: সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখা ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)