দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন পত্রিকাটি আগামী বছর একযুগে পা দিবে। প্রকাশনার টানা ১১টি চলমান বছরে এসে সরকারি মিডিয়া(ডিএফপি)’র তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন পাওয়ার খবরটি সত্যিই আনন্দের। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ বিধৌত জামালপুর জেলার প্রত্যন্ত পল্লী কুটামনি থেকে একটি সংবাদপত্রের নিয়মিত প্রকাশনা টিকিয়ে রাখা দুরূহ বৈকি! মফস্বলগুলোতে এমনিতেই সচরাচর মিল-কারখানা নেই। একমাত্র কৃষি নির্ভর মানুষের জীবন জীবিকার ইতিহাস কষ্টসাধ্য। এই পরিবেশে সংবাদপত্র পরিচালনা কিংবা টিকিয়ে রাখা শুধু জটিলই নয়; একটি দূরন্ত সাহসের উদাহরণ।
দেশ স্বাধীনের পর জামালপুর জেলার ইতিহাসে প্রথম সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু করেন-প্রয়াত সাংবাদিক মুসলিম উদ্দিন সুজন। তিনি জামালপুর বার্তা নামে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। ক্রমান্বয়ে জেলা পরিষদ পরিচালিত সাপ্তাহিক জামালপুর প্রবাহ, আব্দুল হামিদ কবিরত্ব সম্পাদিত পাক্ষিক পল্লীকণ্ঠ-পরে দৈনিক, মোস্তফা বাবুল সম্পাদিত সাপ্তাহিক পূর্বকথা, শফিক জামান লেবু সম্পাদিত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমানের মালিকানায় সাপ্তাহিক ঝিনাই, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মালিকানায় সাপ্তাহিক শাহ্ জামাল, শাহিদুর রহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক উর্মিবাংলা, পরে দৈনিক হয় এবং দৈনিক মালঞ্চ বাজার, ছানোয়ার হোসেন বাদশা সম্পাদিত সাপ্তাহিক জনক, দৈনিক জনবাংলা, আনোয়ার হাসান বাবু সম্পাদিত সাপ্তাহিক দায়বদ্ধ-মাসিক ঋৃদ্ধি, বজলুর রহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক সচেতনকণ্ঠ পরে দৈনিক, এম. এ জলিল সম্পাদিত সাপ্তাহিক জামালপুর সংবাদ-দৈনিক আজকের জামালপুর, নূরুল আলম সিদ্দিকী সম্পাদিত সাপ্তাহিক মুক্ত আলো পরে দৈনিক এবং নবযুগ, মোফাজ্জল হোসেন সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবতান পরে দৈনিক, মাহবুবুর রহমান সম্পাদিত পল্লীবাণী, পল্লীর আলো, সাইদ পারভেজ তুহিন সম্পাদিত দৈনিক জামালপুর দিনকাল, ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর মালিকানায় সাপ্তাহিক কালাকাল, ছানোয়ার হোসেন ছানুর মালিকানায় জামালপুরকণ্ঠ, রেজাউল করিম রেজনু সিআইপির মালিকানায় দৈনিক আলোচিত জামালপুর, জাহিদ আনোয়ার সম্পাদিত দৈনিক জামালপুর এক্সপ্রেস, মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল সম্পাদিত দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, শাহীন আল আমিন সম্পাদিত দৈনিক গণজয়, সৈয়দ শওকত জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক জনদ্বীপ ছাড়াও সাহিত্যপত্রিকা নিয়মিত-অনিয়মিতসহ ৬০-৬৫টি পত্রিকা বের হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে কোনোটি কয়েক সংখ্যা বের হবার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোনোটি ২/১ সংখ্যা বের হবার পর আর আলোর মুখ দেখেনি। এই উদারহণটুকু এজন্যই দিলাম যে, মফস্বল থেকে সংবাদপত্র বের করা যতটা সহজ, তার চেয়ে টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন। বিশেষ করে বর্তমান বাজারে কাগজ-কালিসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করা সত্যিই কষ্টসাধ্য।
জামালপুরে নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র সমূহের মধ্যে দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, দৈনিক পল্লীকণ্ঠ প্রতিদিন, দৈনিক আজকের জামালপুর, দৈনিক মুক্ত আলো, দৈনিক পল্লীর আলো, দৈনিক জামালপুরকণ্ঠ, দৈনিক আলোচিত জামালপুর এবং দৈনিক জামালপুর দিনকাল অন্যতম। বর্তমান বাজারে সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখতে হলে বিজ্ঞাপন নির্ভরতার বিকল্প নেই। রাজধানী বা বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক সংবাদপত্রগুলোর ক্ষেত্রে কম-বেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু বিজ্ঞাপন আশা করা গেলেও জেলা শহর বা মফস্বলে সেরকম বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।
মফস্বলে যেখানে মোটা ভাত-মোটা কাপড়ের প্রত্যাশা পুরণ হলেই মানুষ স্বস্তি বোধ করেন। সেখানে সংবাদপত্রের খোড়াক যোগান দেয়া গরীবের হাতি পালনের ন্যায় একটি উপমা মাত্র। দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেলের বেলায় এই উদাহরণ প্রযোজ্য। কুটামনি রেলগেট সংলগ্ন মায়ের আঁচল নামের একটি মার্কেট থেকে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার সফলতার কাহিনী পাঠককে নাড়া দিবে, এতে কোনই সন্দেহ নেই। সম্প্রতি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের একটি তদন্ত টীম জামালপুর-শেরপুর জেলার সংবাদপত্রের অফিসগুলো পরিদর্শন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন পত্রিকাটিকে ডিএফপি তালিকভুক্ত করা হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে সংবাদকর্মীদের জন্য একটি সুখবর। দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন পত্রিকা হয়ে উঠুক গণমানুষের কণ্ঠস্বর। বর্তমান দূর্মুল্যের বাজারে পত্রিকাটি টিকে থাকুক, এ প্রত্যাশা করি।
লেখক: দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেলান্দহ রিপোর্টার্স ইউনিটি, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন