\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \ |
জামালপুর শহরের নাগরিক সমস্যাগুলোর অন্যতম যানজট সম্পর্কে অবগত নয় এমন জামালপুরবাসী খুঁজে পাওয়া দায়। সমাজ অভিযোজনের কালচক্রে মানুষের শহরমুখী হয়ে পড়ার ফলে শহরে জনসংখ্যার আধিক্য বেড়ে যায়। জীবিকার তাগিদে গ্রাম থেকে ছুটে আসা মানুষ স্থানীয়দের সঙ্গে শহরের রাস্তাগুলোতে পিপীলিকার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় যখন সম্ভাব্যের তুলনায় অধিক যানে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তখনই দেখা দেয় এই যানজট! যানজটের প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে- অবৈধ রাস্তা দখল এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করা। একটি শহরে মোট আয়তনের শতকরা ২০ ভাগ রাস্তা থাকতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, জামালপুর শহরে এই পরিমাপের ৫-৬ ভাগ রাস্তা। এছাড়াও একটি পূর্ণ পরিসরপ্রাপ্ত সড়কও পাচ্ছে না তার যোগ্য ব্যবহার ব্যবস্থা।
সড়কের অর্ধেকটা জায়গা দখল করে আছে বিভিন্ন দোকানিরা। তাদের মালামাল, স্ট্যান্ডবোর্ড, ভ্রাম্যমান দোকানে বেচাকেনা অব্যাহত থাকাকালে রাস্তায় আটকে পড়ে যাচ্ছে শত শত গাড়ি। তবে সেদিকে যেন কারও নজর নেই! আমাদের জনসংখ্যার অনুপাতে রাস্তা না বাড়লেও নির্বোধ জনগণ অবৈধভাবে সীমিত আকারের রাস্তাকে গাড়ির শো- গ্রাউন্ড বানাতে প্রস্তুত। যান চলাচলের জায়গায় নিজস্ব গাড়ি রাখার সুযোগ পেলেই সেটাও তারা হাতছাড়া করতে নারাজ। তাছাড়া অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করেও হীনকর্মে চর্চাশীল থাকেন তারা। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত অটোবাইক চালকরা নিজেদের ইচ্ছামতো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। মানতে চায় না কোনো ট্রাফিক রুল। নিজেদের বিজ্ঞ মনে করে জ্ঞানহীন চালকরা ওভার টেকিংয়ের মাধ্যমে অন্য গাড়িগুলো ছাড়িয়ে যেতে চেয়ে একসময় নিজেরাই যাত্রীসহ আটকে পড়ে যানযটে। শহরের অপ্রশস্ত রাস্তাগুলোর পথচারীরা ফুটপাতের অভাবে যখন মূল সড়কে চলাচল করে তখন তাদেরও ট্রাফিক জ্যামের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিত্তশালীরা একক পরিবহণের জন্য যে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ব্যবহার করে থাকেন সেগুলোও শহরের বিরাট অংশজুড়ে থাকে। সূক্ষ্ণ বিচারে দেখা যায় বিত্তশালীদের ব্যক্তিগত একটি গাড়ি ১০ জন সাধারণ যাত্রীর জায়গা দখল করে। যা যানজটের অপ্রতিরোধ্য কারণ।
মাঝে মাঝে যানজট এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে অসংখ্য যানবাহন অনেকটা সময় একই স্থানে আটকে থাকে। যার ভোগান্তি এককথায় অবর্ণনীয়। বলা বাহুল্য, যানজট শহরবাসীর জীবন থেকে প্রতিদিন তাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা কেড়ে নিচ্ছে।
সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ারসার্ভিসের গাড়ীও এই যানজটের কবলে পড়ছে। উপযুক্ত সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছাতে পেরে রোগীদের কপালে জোটে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আর আগুনে পুড়ে ছাই হয় সর্বস্ব। যানজটের কারণে জামালপুর শহরের রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
মোদ্দা কথা হলো, যানজট আমাদের জামালপুর শহরের একটা ভোগান্তির নাম। তাই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আমাদের যতটুকুই রাস্তা আছে তাতে বর্তমানে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে যানজট ৮০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। যানজট নিরসনে আইনি ব্যবস্থা জোরদার করা আবশ্যক। তাছাড়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে পারলে এবং জামালপুর শহরকে যানজট থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ যথাযথভাবে পালন করতে পারলেই আমাদের জামালপুর শহর অনেকাংশে যানজটমুক্ত হয়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন