\ সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল \ |
বাংলাদেশে মূলত চারটি দল স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশে বড় কোনো আন্দোলন তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যানারে হওয়া স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। কারণ দেশের গতানুগতিক রাজনৈতিক দলগুলোর গায়ে অনেক কলঙ্ক রয়েছে। তাদের অতীত ইতিহাস এবং রেকর্ড মানুষ ভোলেনি। আমরা দেখেছি এই আন্দোলনটা কিভাবে রাজনীতির ব্যানারের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণের ভেতর থেকে উঠে এসেছে। এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের শিখিয়েছে বৃহৎ আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক দল আবশ্যকীয় না। জনগণ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেও একটি ব্যাপক আন্দোলন তৈরি হতে পারে। এই আন্দোলন থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, কোনো অন্যায় চিরদিন চলতে পারে না। একটা দীর্ঘ অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যখন মানুষ জেগে ওঠে এবং বিদ্রোহ করে তখন সেটা অপ্রতিরোধ্য হয়। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের সামনে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনো পথ ছিল না। তাছাড়া এটা ছিল একটা ন্যায্য আন্দোলন। তাই দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল এই আন্দোলনে। প্রথমে তারা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেনি শুধু তাদের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাদের উপর আক্রমণ করা শুরু করে, সেটা জনগণ গ্রহণ করতে পারেনি। প্রথমত, জনগণের মধ্যে আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল তারপর শিক্ষার্থীদের ন্যায্য এই আন্দোলনে নৃশংসভাবে হামলা- সবমিলে জনগণ মাঠে নেমে আসে। সেখানে শ্রমিক, কৃষকের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। আন্দোলনে সরকার যত নৃশংসতা বাড়াতে থাকে আন্দোলনে জনগণের সমর্থন এবং সম্পৃক্ততা তত বাড়তে থাকে। মানুষ সরকারি বাহিনী ও তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের আক্রমণকে সম্পূর্ণ তুচ্ছ জ্ঞান করে দৃঢ়তার সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সূত্রপাত করলেও এক সময় এই আন্দোলন হয়ে ওঠে গণমানুষের। শ্রমিক, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, শিল্পী, আইনজীবী নির্বিশেষে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে সবার। আন্দোলনে একদিকে গণমানুষের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে অন্যদিকে সরকারকে দেখা যায় আক্রমণাত্মক। ৪ আগস্ট আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তেও সরকারের মধ্যে কোনো অনুতাপ দেখা যায়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনও বলেছিলেন, এই আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করছে তারা সবাই সন্ত্রাসী, তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, শেখ হাসিনা সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর নৃশংসতা আরও বাড়াবে। ২ আগস্ট দ্রোহযাত্রার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সরকারের পদত্যাগের দাবিটা ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। এরপর সরকারের পতন ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। কারণ সরকারের বল প্রয়োগের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকেও আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করা আর সম্ভব ছিল না। গুলি করে মানুষ মেরে তাদের পক্ষে আর টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। একদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলি চালানো অব্যাহত রাখে, অপরদিকে ছাত্র-জনতার মিছিলে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অবশেষে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণমানুষের একটি আকাঙ্খা প্রকাশিত হয়েছে। তারা একটি পরিবর্তন চান- এজন্য তারা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন। মানুষ বলছে, আমরা আর আগের মতো অবস্থা চাই না। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বা বিএনপির যে শাসনকাল মানুষ এখনো মনে রেখেছে সেই ধরনের শাসন মানুষ আর দেখতে চায় না। তরুণ শিক্ষার্থীদের আঁকা দেওয়ালের গ্রাফিতিগুলোতে বলছে, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই- যেখানে কোনো নিপীড়ন থাকবে না, কোনো বৈষম্য থাকবে না।
বৈষম্যহীন কথাটির ক্ষেত্র অনেক বড়। এই বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে একটা দেশকে অগ্রসর হতে গেলে তার রাজনীতি খুবই স্পষ্ট হতে হবে। রাজনীতির লক্ষ্য এবং কর্মসূচি স্পষ্ট হতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত সেটা দেখিনি। মানুষের মধ্যে সংস্কারের যে আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে সেটা কোন দিকে যাবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। রাজনৈতিক দলগুলো বৈষম্যহীনতার কথা বলছে কিন্তু বৈষম্যেরই রাজনীতি করছে। যদি এমনটাও ঘটে যে, ভিন্নমতের ওপর হামলা হচ্ছে তাহলে সেটাও এই সম্পূর্ণ বৈষম্যহীনতার আকাঙ্ক্ষার বিপরীত। যত দ্রুত রাজনীতির লক্ষ্য এবং কর্মসূচি স্পষ্ট হবে ততই ভালো। আমরা জানি স্বৈরাচারী সরকারের নানা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ছিল। একটা সুবিধাভোগী শ্রেণি ছিল যারা খুব দ্রুত অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে। এছাড়াও নানারকমের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ছিল যাদের সরকার নানাভাবে সুবিধা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তির নানা রকম স্বার্থ এখানে যুক্ত। ফলে এসব সুবিধাভোগী এবং আন্তর্জাতিক শক্তির নানা রকমের প্রচেষ্টা ছিল এই দেশকে নিজেদের স্বার্থের দিকে নিয়ে যাওয়ার। বাংলাদেশ যদি জনগণের হাতে আসে তাহলে তারা কেউ খুশি হয় না। তারা সবাই চাইবে তাদের পালিত বা তাদের সুবিধা দেবে এমন কোনো গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা থাকুক। এই চেষ্টা এখনো দৃশ্যমান। বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার একটি বড় দায়িত্ব নিয়েছে এবং তাদের সামনে বিরাট পরীক্ষা। এই গণঅভ্যুত্থান থেকে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, গুরু দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমাদের প্রায় সবার সাধারণ ধারণা যে, এখানে শুধু উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই পড়ালেখা করে। কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি সত্য নয়। আমি এমন অনেক পরিবারকে চিনি যারা ঋণ করে এবং পরিবারের সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াচ্ছেন। শিক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে মানুষ সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা রক্ত বিক্রি করে হলেও তার চিকিৎসা করার চেষ্টা করে। তেমনি সন্তানের লেখাপড়ায় একজন অতি দরিদ্র ব্যক্তিও তার সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে গত এক দশকে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। একজন দরিদ্র পিতাও মনে করছেন শিক্ষার উপর ভর করে তার সন্তান যেন দারিদ্র্যের দুষ্টু চক্র থেকে বের হতে পারে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট আসন নেই। এ কারণে কষ্ট করে হলেও অভিভাবকরা সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানরা দেশে লেখাপড়া করে না। তারা সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করতে পাঠায় এবং তাদের এ দেশে কোনো চাকরিও দরকার নেই। কিন্তু এই দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জীবিকার প্রয়োজন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আন্দোলনের শুরু থেকেই সমর্থন জুগিয়েছে। তারা যখন দেখছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এভাবে আক্রান্ত হচ্ছে তখন তারা ঘরে বসে থাকতে পারেনি। তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং রাস্তায় নেমেছে। আমাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেছে, যখন পুলিশ আমাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালালো আমার সামনে ছয়জন শিক্ষার্থী মারা গেল। আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি কিন্তু আমি সেখান থেকে সরতে পারিনি। কারণ আমার মনে হয়েছে, অন্যদের রেখে আমি এখান থেকে সরে যেতে পারব না। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিল যে, মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মমর্যাদাবোধ তৈরি হয়েছে। এই সময়টাতে মানুষ তার বিবেক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল এবং তাদের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ সামনে ছিল না। প্রত্যেকে চিন্তা করছিল যাতে সবাই নিরাপদ থাকে এবং সবাইকে রক্ষা করা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যখন পুলিশের সঙ্গে পেরে উঠছে না, মার খাচ্ছে তখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারাও যখন রাস্তায় মার খাচ্ছে তখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে। দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী তার মাকে চিঠি লিখে যাচ্ছে, আমি আর ঘরে থাকতে পারছি না, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও নৃশংসতা সমাজের সব মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে দিয়েছে। এটাই ছিল এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা। তরুণদের সম্পর্কে বড়রা সবসময়ই একটু ভুল ধারণা করে। বড়োরা সব সময় বলে, তরুণরা অবক্ষয়ের শিকার। এমন প্রবণতা সব সময়ই ছিল, সব জেনারেশনেই ছিল। আমরা জানি শিশু, কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে সংবেদনশীলতা অনেক বেশি থাকে। তাদের মধ্যে মায়া-মমতা ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকে। তরুণরা অনেক বেশি মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে সত্যি, তারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে থাকে বিষয়টি তেমন নয়। মোবাইলে আরো অনেক কিছুই দেখা যায় ও করা যায়। দেশের এবং বিদেশের সব খবরাখবরও মোবাইলেই রাখা যায়। ফলে আমাদের তরুণরা টেকনিক্যালি সক্ষম ও দক্ষ হচ্ছে। এই জেনারেশনটি কমিউনিকেশনের দিক থেকে এবং তথ্য সংগ্রহের দিক থেকে অনেক বেশি দক্ষ। বিষয়টা এমন যে, যখন সে ব্যক্তিগত জগতে থাকে তখন সে এক রকম আর যখন সমাজের মধ্যে কোনো নড়াচড়া হয় তখন সে দ্রুত তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়। এখানে টেকনোলজির বড় ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে জাতিবিদ্বেষ, ধর্মীয় বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, সম্পদ বন্টনের বৈষম্যসহ নানা রকম বৈষম্য রয়েছে। এই সব কিছু থেকে বের হতে হলে একটা কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। আমরা একটি ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি যেটাকে পুঁজিবাদ বলে। আর এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বৈষম্য একটি অনিবার্য পরিণতি। এখানে কিছু লোকের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এবং তারাই রাষ্ট্র চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশ, বল প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনগত কাঠামো। ফলে আমরা যদি বৈষম্যহীন এবং সর্বজনীন বাংলাদেশ করতে চাই তাহলে এসব সমস্যাকে নির্দিষ্ট করতে হবে। এ দায়-দায়িত্ব এতটাই বেশি যা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়। শুধু সংবিধান পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। কারণ সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা চলে না। বরং ক্ষমতা অনুযায়ী সংবিধান তৈরি হয়। সংবিধান অনেক বেশি স্বৈরতান্ত্রিক বা সাম্প্রদায়িক তার মূল কারণ সিস্টেম বা ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক এবং সাম্প্রদায়িক। আমরা যে রাষ্ট্রের মেরামতের কথা শুনছি সেখানে সংবিধান একটি অংশমাত্র। আমাদের প্রয়োজন সামগ্রিক কাঠামোর সংস্কার। যেমন, দেশের শিক্ষা কি বাণিজ্যিক থাকবে নাকি সর্বজনীন হবে? দেশের চিকিৎসা বাণিজ্যিকীকরণ হবে নাকি সবার অধিকারে আসবে? পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কি সবার হবে নাকি কিছু মানুষ প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট দিয়ে সারা ঢাকা শহরের রাস্তা দখল করে রাখবে আর অন্যরা বাসে ঝুলবে? মোটকথা পাবলিক ইন্টারেস্ট অর্থাৎ সর্বজনের স্বার্থকে সামনে নিয়ে যে রাজনীতি তার শক্তি বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ হবে। সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। আর এর জন্য সরকারের একটি সংবিধান সংশোধন কমিশন গঠন করা উচিত। সেখানে বিশেষজ্ঞরা দেখবেন যে কোন কোন জায়গায় বৈষম্য এবং নিপীড়নের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। সেগুলো থেকে মুক্ত একটি সংবিধান তৈরির জন্য তারা সুপারিশ করবেন। বৈষম্যহীন সংবিধান প্রস্তাব করে সেটা জনমতের জন্যও ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। দেশের সম্পদের মালিকানা ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ আমাদের দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত পুরোপুরি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অথচ এগুলোর মালিক বাংলাদেশের মানুষ। এগুলো রাষ্ট্রের নীতি-কৌশলগত বিষয়। এভাবে বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে তার উত্তর খুঁজতে হবে। সেই উত্তরগুলোকে জনগণের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক সত্যি হিসেবে দাঁড় করাতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একদমই প্রস্তুত নয়। প্রতিটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটি শক্তি প্রকাশিত হয়। জনগণের সংগঠিত শক্তি যখন দুর্বল হয় তখন রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনী কিংবা আমলাতন্ত্র আবার তাদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এজন্য জনগণের মধ্য থেকে যে শক্তি বা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয় সেটা ধরে রাখাই বড় কাজ। যারা জনগণের সেই শক্তির পক্ষে এবং যারা মনে করেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরি করা প্রয়োজন তারা আপাতদৃষ্টিতে যতই ছোট হোক তারা যদি এই শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয় এবং একত্র হয় তাহলে ক্রমাগত সমাজের মধ্যে একটি মতাদর্শিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এটি একটি সংগ্রামের বিষয়। বর্তমান ব্যবস্থার সুবিধাভোগীরা সহজে ছাড়বে না। সুতরাং তাদের মোকাবিলা করা এবং তাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য জনগণের শক্তিকে দাঁড় করানো প্রয়োজন। জনগণের সেই শক্তিকে দাঁড় করানোর জন্য অব্যাহত চেষ্টা এবং লড়াই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে সেটা জনগণের শক্তিকে একটি কাঠামো দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই জনগণের শক্তি আমাদের জন্য একটি বড় অবলম্বন। একই রকম আরেকটা অবলম্বন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমরা সব সময়, অন্যায়, নিপীড়ন ও স্বৈরাচারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রেরণা খুঁজি। ফলে সেই শক্তির সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের এই শক্তি যুক্ত করতে হবে। আমি আশা করি অবশ্যই এমনটা ঘটবে। বাংলাদেশের মানুষ বৈষম্যবিহীন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণে একট্টা হয়ে দাঁড়াবে। এটাই সময়ের অমোঘ দাবী। আর তাই তথাকথিত বৈষম্য সৃষ্টিকারী রাজনীতি বন্ধ করা জরুরি।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন