| সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল | |
পাঠক কিংবা মহান ও আলোকিত মানুষদের জ্ঞান প্রদান করা আমার উদ্দেশ্য নয়। সে স্পর্ধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আমার নেই। আমার মনের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে জাগ্রত দুর্নীতি বিষয়ক কিছু কথা, দুর্নীতিগ্রস্ত জাতির উদ্দেশ্যে লেখার ইচ্ছা ও আগ্রহ থেকেই এই প্রতিবেদন। জগতে শিক্ষিতজনেরাই বেশি দুর্নীতে আসক্ত হয়ে থাকে।
মানুষের চিন্তাচেতনা, কর্মের যুগপৎ সৌন্দর্য্য ও আচরণে ‘সততা’ প্রকাশ পায়। আবার এর বিপরীতেই ঘটে দুর্নীতি। ব্যক্তি জীবনে মনোগত বিকাশ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার উন্নতি, অগ্রগতিতে বড় বা ক্ষুদ্রভাবে বাঁধাগ্রস্ত করার প্রয়াসের নামই দুর্নীতি। ‘দুনীতি’কে একটি আর্থিক সম্পর্ক বা আত্মসাৎ, চুরি বা পকেটস্ত করাকেই বুঝায় না। সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানে (সে প্রতিষ্ঠান আর্থিক হোক বা না হোক) কারো উপর অর্পিত, আহরিত, আরোপিত দায়িত্ব কর্তব্য যথাযথভাবে পালন না করার নামই দুর্নীতি। এমন কি ভোক্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণও দুর্নীতির প্রমাণ। উভয় প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী কাজে অবহেলা, নির্ধারিত সময়ে অফিসে না আসা বা নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রস্থান করা, অফিসে বসে কাজ না করে বসে থাকা, আড্ডা দেয়া, স্বজনপ্রীতি করা, ফাঁকি দেয়া, প্রতিষ্ঠানের কোনো জিনিস অপব্যয় করা, অনৈতিকভাবে নিজের কাছে রাখা বা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা, কোনো কিছু আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নেয়া বা সরানো বা লুকিয়ে রাখা, অসৎ উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে গোপন রাখা, রাষ্ট্রের বা প্রতিষ্ঠানের কোনো গোপনীয় কোনো দলিল দস্তাবেশ বা কোনো তথ্য, স্কেচ, ম্যাপ যে কোনো উদ্দেশ্যে অননুমোদিত কারো কাছে দেয়া বা প্রকাশ করা, কোনো সেবার বিনিময়ে কারো কাছ থেকে উপঢৌকন/উপহার বা নগদ অর্থ নেয়ার নামই দুর্নীতি। কাউকে মামলার ভয় দেখিয়ে, থানা হাজতে আটকে রেখে, মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থ আদায় করা, কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটে মিমাংসা করার নামে অর্থ নেয়া বা নেয়ার প্রতিশ্রতি নেয়া, চেক বা সাদা কাগজ বা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া, অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানী করা বা হয়রানীর করার ইচ্ছাপোষণ করাও দুর্নীতি। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যে কোনো পদে চাকরি দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া, ঘুষ নেয়া বা অনুরুপ প্রয়াস চালানো, প্রতিশ্রুতি দেয়াও দুর্নীতি।
কোনো শিক্ষক যথাসময়ে স্কুলে বা কলেজে না আসা, শ্রেণি পাঠদান থেকে বিরত থাকা বা ভুল শেখানো, শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে, পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে প্রাইভেট, কোচিং করানো, পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে ফেল করানো বা প্রাপ্যের চেয়ে বেশি নম্বর প্রদান করা, শিক্ষার্থীর নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি, উন্নয়ন ফি, অতিরঞ্জিত বা মাত্রাতিরিক্ত কোনো ফি গ্রহণ অথবা ফি গ্রহণের পর কোনো সেবা প্রদান না করা, একই সময়ে দু’টি বা ততোধিক ফি গ্রহণ করে একটি সেবা প্রদান করাও দুর্নীতি। কোনো ডাক্তার তার বদলীকৃত হাসপাতাল বা কমিউনিটি সেন্টারে যোগদান না করা, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করার জন্য কর্মরত কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম বা যশ ব্যবহার করাও দুর্নীতি। কোনো ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ/লোন নিয়ে যথাসময়ে ফেরত না দেয়া ও কমিশন লেনদেন করাও দুর্নীতি। অন্যভাবে, প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ক্ষমতার অপব্যহার করার নামই দুর্নীতি। আর্থিক সুবিধা লাভে ব্যক্তিগত অসততা, অসুবিধা ও পাপাচারের মাধ্যমে কোনো সুবিধা ভোগ করা, অর্জন করা ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়াকে দুর্নীতি বলে। যে কোনো দলিল দস্তাবেশ বা ডকুমেন্ট জাল করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করাকে দুর্নীতি বলে। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানিক পদ্ধতিকে ব্যক্তিগতভাবে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে দুর্নীতিগ্রস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিকে দুর্নীতি পরায়ণ হতে বাধ্য করাকে দুর্নীতি বলে। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষমতা অর্জনের স্বার্থে যে-কোনো ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ, দলিল প্রমাণাদি, আইন-কানুন বা বিধির মধ্যে ভাষাগত বা তথ্যগত পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থে বিকৃতি ঘটনাকে দুর্নীতি বলে। প্রজাতন্ত্রের কোনো প্রতিষ্ঠানে বা সরকারি দায়িত্বে থেকে কারো চাটুকারিতা, চামচামি করা, দালালি করা, স্বজনপ্রীতি করা বা সেবা গ্রহীতার সাথে অসৌজন্যমুলক ব্যবহার করা বা হয়রানি করাও এক ধরনের দুর্নীতি। প্রতিদিন প্রতিক্ষণে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বীজ অঙ্কুরোদগম হচ্ছে। যতই কথা বলা হোক না কেন দুর্নীতি কমছে না বরং বাড়ছে।
মানুষ কখন কিভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তা কেউ বলতে পারবে না। তবে মানুষ যখন সাংসারিক ও মানসিক পর্যায়ে অভাবগ্রস্থ হয় তখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়। কেউ পারিবারিক কারণে, স্বভাববশে, কেউ কারো প্ররোচনায়, কেউ পরিবেশগত কারণে, কেউ বা লোভের বশে দুর্নীতিতে জড়িয়ে যায়। দুর্নীতি একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে ব্যাধি এবং জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা। পরিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা যেতে পারে। আর তার এখনই সুসময়।
প্রথমত, পারিবারিকভাবে পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিকে বুঝিয়ে, প্রেসার দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আনতে পারে। একইভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে সামাজিকভাবে না মিশে বা বয়কট করে দুর্নীতিমুক্ত সমাজে ফিরে আনা সম্ভব হবে। এজন্য জনসচেতনতা প্রয়োজন হলেও এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ সচেনতা গড়ে তুলতে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। কৌশল অবলম্বণসহ রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও গীর্জার ধর্ম গুরুদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়; তবে, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। এ জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে : (১) প্রথমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধানে ‘দুর্নীতি’র সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। এ বিষয়ে আলাদা নির্দেশনা জারি করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের ফাঁদে ফেলে প্রমাণসহ গ্রেফতার করতে হবে এবং চাকরিচ্যুতসহ কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। (২) সবার আগে জানতে হবে মানুষ কখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। শিশুকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়েন, তখন দৈনিক সমাবেশে জাতীয় সংগীত গায় এবং আগামীতে সংবিধান, সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ বাংলাদেশকে কিভাবে সমৃদ্ধ করবেন সে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এরপর প্রাথমিক স্তর থেকে নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে একই সমাবেশ, জাতীয় সংগীত ও শপথ বাক্য পাঠ করেন, এই ্দুই স্তরেই শুদ্ধাচার, নীতিবাক্য, নৈতিকতা শেখানো হয়। তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজে যায়, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। তখন আর জাতীয় সংগীত নেই, নেই কোনো শপথ বাক্য ও শুদ্ধাচার, নীতিবাক্য, নৈতিকতা শেখানোর কোনো উদ্দ্যোগ নেই। যারা এই সময়ে শিক্ষার্থীদের এই সব শেখাবেন, তাদের অধিকাংশই অনৈতিক উপায়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যেনতেন উপায়ে চাকরি নামক সোনার হরিণ খুঁজতে থাকে। অন্চ্ছিা সত্ত্বেও সেই মেধাবী ছাত্র দুর্নীতি নামক মারাত্মক ছোয়াছে রোগে আক্রান্ত হয়। অনেকে ভালো থাকলেও শেষে তারাও এই প্রতিযোগিতায় নেমে আসে। (৩) শিক্ষা জীবনের তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরে জাতীয় সংগীত ও শপথ বাক্য পাঠসহ শুদ্ধাচার, নীতিবাক্য, নৈতিকতা শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। (৪) সকল অধিবেশনের প্রথম দিনে জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় সংগীত গাইতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত টেকসই উন্নয়নমুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে প্রত্যয় ব্যক্তসহ দুর্নীতিতে জড়িত হবেন না বা অনুরূপ কোনো কাজে সায় বা অনুমোদন দিবেন না বলে শপথ বাক্য পাঠ করতে হবে। একই সাথে মাদকসেবন, মাদকসহ চোরাচালানের কোনো ব্যবসায় জড়িত হবেন না, পেশিশক্তি কাজে লাগিয়ে কোনো কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করবেন ও মদদ দিবেন না সে বিষয়েও শপথ বাক্যে থাকতে হবে। (৫) মানুষ কর্মজীবনে সমাজ বা সহকর্মীদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বা সাংসারিক কারণে দুর্নীতিবাজ হয়। তাই প্রতি রবিবার অফিস সময়ের আধা ঘন্টা আগে উপজেলা চত্বরে নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে ও নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ের কর্মরত (সেদিন কর্তব্যরত থানার ডিউটি অফিসার, হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার/ নার্স ব্যতীত, একই ডাক্তার/নার্স ও থানার ডিউটি অফিসার প্রতি রবিবার ডিউটিতে না থাকেন সে দিকে নজর রাখতে হবে এবং রবিবারে ছুটি নেয়ার প্রবণতাও নিরুৎসাহী করতে হবে) সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী (পুলিশ প্রশাসন,স্বাস্থ্য প্রশাসন, শিক্ষা প্রশাসন)সহ উপস্থিত হতে হবে এবং জাতীয় সংগীত গাইতে হবে, দুর্নীতি করলে ইহকালের সামাজিক মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা ও পরকালের ভয়াবহতাসহ নীতিবাক্য, শুদ্ধাচার সম্পর্কে বার বার আলোচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সকল ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের সহায়তা নিতে হবে। সেখানে নিম্নবর্ণিত শপথ বাক্য পাঠ করতে হবে। উপজেলা চত্বর মসজিদের ঈমামসহ সকলকে উপস্থিত নিশ্চিত করতে হবে। যারা উপস্থিত হবেন না বা দেরিতে উপস্থিত হবেন, তাদের মনে দুর্নীতি করার প্রবণতা আছে বলে ধরে নিতে হবে এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা ও আর্থিক জরিমানাসহ কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। (৬) একইভাবে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় প্রশাসন, স্বায়ত্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান, আধা-স্বায়ত্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী (জেলখানা, পুলিশ লাইন্স, আর্মড পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বনরক্ষী, নৌপুলিশ, শিল্পপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস), গ্যাস, বিদ্যুৎ, এরিয়া এফসি, এফপিও, রাজস্ব, ডাক, পাসপোর্ট, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জনশক্তি রপ্তানি অফিস, ইসি,বিআইআরটিসি, সনদ, নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদানকারী অফিস, কাস্টমস,ওয়াসা, বিআরটিসি, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ টিভি, বেতার, এফডিসি, সেমি-গভর্ণমেন্ট দপ্তর, বনবিভাগ, ওয়াপদাসহ উপজেলা বা জেলা প্রশাসন থেকে দুরে অবস্থিত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিসসমূহ স্ব-স্ব প্রধানের নেতৃত্বে জাতীয় সংগীত গাইবেন এবং শপথ বাক্য ও শুদ্ধাচার পাঠ করবেন। শিক্ষকরা প্রতিমাসের যে কোনো একটি বিশেষ দিন বা মাসিক সমন্বয় সভার শুরুতে জাতীয় সংগীত গাইবেন ও শপথ বাক্য ও শুদ্ধাচার পাঠ করবেন। লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সরকারের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই প্রোগ্রাম থেকে বাদ না পড়েন। ৪০টি মন্ত্রণালয় ও ১২টি বিভাগ এই ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
‘‘আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই মর্মে সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ করতেছি যে, আমি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশকে সকল প্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবো। বাংলাদেশের সংবিধানসহ আমার প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষা করবো, প্রতিষ্ঠানের বা সরকারের কোনো দ্রব্য সামগ্রী নষ্ট করবো না, অপব্যবহার, অপচয় ও অবহেলা করবো না। আমি সরকারের যাবতীয় উন্নয়ন কাজের ও আদেশের সমর্থন করবো ও পালন করবো। স্থানীয় ও জাতীয় উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবো। আমি জনগণের সেবক, সেবা প্রদান করাই আমার ব্রত। কাউকে জিম্মি করে, আটক করে বা আটকের ভয় দেখিয়ে ও আমার সেবা প্রদান বা কাজের মাধ্যমে কারো নিকট থেকে কোনো প্রকার উপঢৌকন বা উপহার নিবো না, ঘুষ নিবো না, ঘুষ নিতে বা দিতে প্ররোচনা করবো না, প্রলোভন দেখাবো না, আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করবো না। আমার প্রতিষ্ঠানের কেহ ঘুষ বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তার সঙ্গ ও পক্ষ দিবো না, তবে বিষয়টি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জ্ঞাত করবো। অফিস ফাঁকি দিবো না, নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসবো এবং নির্ধারিত সময়েই প্রস্থান করবো। জনগণের কষ্ট বা দুর্ভোগ হয় এমন কোনো কার্যকলাপ বা আচরণ করবো না, জনগণ ও সেবাগ্রহিতাকে হয়রানী করবো না, কোনো তথ্য, স্কেচ, ম্যাপ, ঘটনার আলামত নষ্ট বা বিকৃত করবো না, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদবাজ, হানাহানি, মারামারি, শিশু নির্যাতন ও অর্থহীন আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকবো। সাম্য, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে কর্মরত প্রাতিষ্ঠানিকরুপে সমাজ সেবা, নৈতিকতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করবো। আমি আরও শপথ নিচ্ছি যে, আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সকলের প্রতি যথাবিহীত আচরণ করবো। ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষের কারো প্রতি বৈষম্য করবো না, সকলকে মনে প্রাণে সেবাগ্রহিতা মেনে নিয়ে উত্তম আচরণ ও কাজ বা সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবো। নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো, কোনো ফাইল, কাজকর্ম পেন্ডিং রাখবো না, দিনের কাজ দিনেই শেষ করবো এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সরকারি আদেশসহ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সকল আদেশ বা আরোপিত, আহরিত ও প্রদানকৃত অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করতে সদাচেষ্ট থাকবো। আমি দায়িত্বে অবহেলা করলে বা ঘুষ নিলে বা দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনার সাথে জড়িত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা সরকার বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ চাকরিচ্যুত করলে আমি তা মেনে নিবো।’’ (আমিন)
সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সকল স্তরে দুর্নীতির মূল্যেৎপাটন করতে হবে। কেননা, দুর্নীতি সকল প্রকার উন্নয়নের অন্তরায় এবং বাঁধাগ্রস্ত হওয়াসহ জাতীয় জীবনে একটি অভিশাপ। রাজনৈতিক জীবনেও একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির নামই দুর্নীতি। যা সাধারণ জনগণ বা ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন করে।
মনে রাখেবেন, আপনাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আপনার কাফনের কাপড় বাজারে এসেছে, কাঠ, বাঁশ রেডি আছে। আর কোনো দুর্নীতি ও কারো অমঙ্গল হয় এমন কাজ করো না। প্রতিদিন অন্তত তিনটি করে ভালো কাজ করো। দিনের শেষে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো আজ আমি কী কী করলাম। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, আপনার চারপাশের পরিবেশ এমনি বদলে যাবে, আপনার জীবন, আপনার পৃথিবী তখন যথার্থই মধুময় হয়ে উঠবে।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন