মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল |
একটি শহরের সৌন্দর্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অনেকাংশে নির্ভর করে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর। আমাদের জামালপুর শহরেও এই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আমাদের শহরের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ গতানুগতিক পদ্ধতি ও গতিতে এখনও দৃশ্যমান। অথচ এতে পরিবর্তন আনা আবশ্যক। এখনও শহরের অধিকাংশ খালি জায়গায় এমনকি রাস্তার ধারে বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই যানবাহন ও পথচারী চলাচলে অসুবিধা হয় এবং আবর্জনার দুর্গন্ধে পথচারীদের জীবন অতিষ্ঠ হচ্ছে। নবনির্মিত রেলওয়ে ওভারপাসের নিচের জায়গাগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ তো নেইই, উপরন্তু সেখানেও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
না বললেই নয়, বাসাবাড়ির আশপাশ, রাস্তা-বাজার, জনসমাগম স্থল, ডোবা, বিভিন্ন স্থাপনার আড়াল-আবডালকে ময়লা ফেলার উৎকৃষ্ট জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া হচ্ছে। দোকানিরা রাতে দোকান বন্ধ করার সময় যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলে রাখে। কোনো কোনো কাঁচাবাজারের অবস্থা আরও করুণ। কাদা-পানি, ময়লা-আবর্জনায় সেখানে যাওয়া-আসাই কঠিন হয়ে পড়ে। যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা কফ-থুতু, পান-বিড়ির উচ্ছিষ্টাংশ, ফলমূলের খোসা, কাগজ, পানির বোতল, নির্মাণসামগ্রীর ময়লা-আবর্জনায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এভাবে আর কতকাল?
সম্প্রতি শহরের অনেক মহল্লায় স্থানীয়ভাবে ময়লা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসার সামনে প্যাকেট করে ময়লা রেখে দিলে স্থানীয় কর্মীরা সেটা নিয়ে পৌরসভার ময়লা সংগ্রহের ট্রাকে রেখে আসে। স্থানীয় এ কর্মীদের জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে বাসা-ফ্ল্যাট-ইউনিটপ্রতি অঞ্চলভেদে মাসে কম-বেশি ১০০ টাকা দিতে হয়। খোলা রিকশা-ভ্যানে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের সময় দুর্গন্ধে অসহনীয় অবস্থা তৈরি হয়। যে ট্রাকে ময়লা সংগ্রহ করা হয়, সেটা যদি খোলা ট্রাক হয় তাহলে তো আশপাশের মানুষ নাকে-মুখে রুমাল চেপে দ্রুত হেঁটেও দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পায় না। ওইসব ময়লা ট্রাকে তোলার সময় তো দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বাসাবাড়ি, স্থাপনা, রাস্তার কনটেইনারের ময়লা-বর্জ্য অপসারণের সমগ্র প্রক্রিয়া যানবাহন ও জনমানুষের চলাচল যখন কম থাকে, তখন অর্থাৎ মধ্যরাত বা ভোর হওয়ার আগে সম্পন্ন করতে হয়। দিবালোকে এসব সংগ্রহ ও পরিবহন করা ঠিক নয়, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতে জামালপুর শহর পানিতে তলিয়ে যায়। তখন ড্রেন, খালের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ভেসে বেড়ায়। বৃষ্টির পানি সরে গেলেও সেসব বর্জ্য রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনার সামনেই পড়ে থাকে। এতে পরিবেশ দূষিত এবং জনমানুষের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। জামালপুর শহরের আশপাশের বিভিন্ন জলাভূমি, খাল নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এ জায়গাগুলো কীটপতঙ্গের অবাধ বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে আশপাশের লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধূপ পুড়িয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, গোলাপজল ছিটিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উপদ্রব থেকে।
স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য আলাদা না করেই ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিনে। নিক্ষিপ্ত বর্জ্যের তালিকায় রয়েছে সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানবদেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ, ওষুধের শিশি, ব্যবহৃত স্যালাইন, রক্তের ব্যাগ ও রাসায়নিক দ্রব্যসহ অনেক ধরনের চিকিৎসাজাত আবর্জনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা প্ল্যান্ট থাকা জরুরি। কেননা গৃহস্থালি বর্জ্য, মেটাল, প্লাস্টিক ও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য আলাদা করতে পারলে ক্ষতি কম হবে। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি গড়ে না ওঠায় বিভিন্ন রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। দরিদ্র ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ বর্জ্যরে স্তূপ থেকে প্লাস্টিকের বোতল, লোহা, জুতা-স্যান্ডেল, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের কারণে সংশ্লিষ্টরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণ জরুরি। আমরা আশা করবো বর্তমান পৌর প্রশাসক এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন